সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন

আগামী ৬ জুন ঘোষিত হতে যাচ্ছে নতুন বাজেট। নতুন বাজেটে কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতেই বা করণীয় কী—এ নিয়ে কথা বলেছেন তিনজন অর্থনীতিবিদ ও দুজন ব্যবসায়ী। তাঁরা বলেছেন, এ সময়ে প্রবৃদ্ধির চেয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানোতেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

সেলিম রায়হান, নির্বাহী পরিচালক, সানেমপ্রথম আলো

সরকার অর্থনীতির এক বিশেষ পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য নতুন বাজেট দিতে যাচ্ছে। বর্তমানে অর্থনীতির সংকট আরও অনেক ঘনীভূত হয়েছে। বিশেষ করে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা তো এখনো ফেরেনি, উল্টো পরিস্থিতির উন্নতির বদলে আরও অবনতি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ক্রমাগত কমছে। প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, রপ্তানি, প্রবাসী আয়সহ অর্থনীতির সূচকগুলো খুব একটা আশাব্যঞ্জক অবস্থায় নেই। তাই নতুন বাজেটে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার দিকনির্দেশনা বা কার্যকর ব্যবস্থা থাকতে হবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপই কাজ করেনি। মুদ্রানীতি, রাজস্ব নীতি ও বাজার ব্যবস্থাপনার সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ চোখে পড়েনি। বাজেটে দেখতে চাইব, এ বিষয়ে সরকার কী উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ ছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য বেশ কিছু সংস্কারপ্রক্রিয়া শক্তিশালীভাবে নেওয়া প্রয়োজন। কর খাত, ব্যাংকিং খাত, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, ব্যবসার খরচ কমানো, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ইত্যাদি অনেক বিষয়েই বড় সংস্কার দীর্ঘ সময়ের দাবি।

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিসর অনেক বৃদ্ধি করা প্রয়োজন নতুন বাজেটে। দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট। অপ্রয়োজনীয় সরকারি খরচ কমিয়ে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন।

এদিকে সুদের হার বাড়ানোর কারণে ব্যবসার ব্যয় বেড়েছে। তাতে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ব্যবসার খরচ কমাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। নীতি ও বিধিবিধানের অনিশ্চয়তা, ধারাবাহিকতার অভাব এবং অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া হঠাৎ হঠাৎ নীতি পরিবর্তন করা—এসবই বিনিয়োগকারীদের বড় অভিযোগ। এ ছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগ অনেক ক্ষেত্রেই ধীরগতির ও উচ্চ ব্যয়সম্পন্ন। ফলে তা ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগকে খুব বেশি সহায়তা করে না। ঋণপ্রাপ্তির সুবিধার অভাব ও দক্ষ জনবলেরও অভাব রয়েছে। বাজেটে এসব বিষয় সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ দেখতে চাই।

আইএমএফের শর্ত শুধুই নয়, স্বল্পোন্নত বা এলডিসি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ বিদ্যমান শুল্ক ও করছাড় দেওয়ার সুবিধা অনেক ক্ষেত্রেই বজায় রাখতে পারবে না। এ বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ থাকা প্রয়োজন এবং আগামী দু–তিন বছরে এ সুবিধাগুলো কমিয়ে আনতে হবে।