অন্য দেশ পারলে বাংলাদেশ কেন মূল্যস্ফীতি কমাতে পারছে না

অর্থনীতির নানা সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কাল মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে। অর্থনীতিতে কী সংকট চলছে, সমাধান কীভাবে হতে পারে, তা নিয়ে কথা বলেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর

আহসান এইচ মনসুর

মূল্যস্ফীতি বিদেশ থেকে আমদানি করা—এ কথা বলে আর কত দিন পার পাওয়া যাবে। ভারত, থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল, তারা কমিয়ে এনেছে।

বাংলাদেশ কেন পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংককে বলতে হবে, মূল্যস্ফীতি কমাতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকেরই। ডলারের দাম ধীরে ধীরে বাড়ানো হচ্ছে, এটা ভালো। ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করে ফেলতে হবে। সেটা হলে প্রবাসী আয় বাড়বে, রপ্তানিকারকেরাও তাঁদের আয় দ্রুত দেশে নিয়ে আসবেন। এ ছাড়া বিদেশি ঋণের সুদহার এখন ৬ শতাংশ, দেশের ব্যাংকগুলোর ৮-৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে। ফলে বিদেশি ঋণ নেওয়া বন্ধ করে দিয়ে উল্টো আগের ঋণ শোধ করা হচ্ছে। এ জন্য দেশের ব্যাংকগুলোর ঋণের হার বাড়ালে আবারও বিদেশি ঋণের দিকে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকতেন। এতে ডলারের প্রবাহ বাড়ত।

আরও পড়ুন

সুদহার বাড়ালে আমানতের যে সংকট চলছে, তা-ও কমে যেত। অপ্রয়োজনীয় আমদানি কম হতো। তবে আমদানি প্রবৃদ্ধি যেভাবে কমে যাচ্ছে, এভাবে চললে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে যাবে। সে জন্য সুদহারের সীমা তুলে দিতে হবে, তা না হলে বেসরকারি খাত ঋণের অভাবে সংকটে পড়ে যাবে।

দেশের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে আমদানি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার মজুতও ধরে রাখতে হবে। এটা কীভাবে হবে, তার ইঙ্গিত মুদ্রানীতিতে থাকতে হবে। প্রবাসী আয় বাড়াতে দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে হবে, পাশাপাশি ডলারের খরচ কমাতে দেশীয় হাসপাতাল ও শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। চলতি হিসাবের পাশাপাশি আর্থিক হিসাবও ঘাটতিতে চলে গেছে। এটা কীভাবে ঠিক হবে, তা নির্দিষ্ট করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে আর কত দিন সরকারকে দেবে, তা ঠিক করতে হবে। এভাবে টাকা ছাপাতে থাকলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে।

আরও পড়ুন

খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এটা কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা ঠিক করতে হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল খেলাপি ঋণের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর মধ্যে নামতে না পারলেও কী উদ্যোগ নেওয়া হলো, তা পরিষ্কার করতে হবে। অনেক ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে আছে, আরও অনেক ব্যাংক সেই সংকটে পড়বে। অনেক ব্যাংক দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এসব ব্যাংককে একীভূত করে সূচকগুলো ঠিক করার উদ্যোগ নিতে হবে। কয়েকটি ইসলামি ধারার ব্যাংকে যা চলছে, তা বন্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।