সাক্ষাৎকার

কাচশিল্পের জন্য প্রয়োজন শিল্পবান্ধব সরকারি নীতিমালা: নাসিম বিশ্বাস

কাচশিল্প খাতে দুই দশক ধরে কাজ করছে নাসির ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিম বিশ্বাস বাংলাদেশের কাচশিল্পের বাজার ও বর্তমান অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার: জাহিস হোসাইন খান

প্রথম আলো:

নাসির ফ্লোট গ্লাস কী ধরনের কাচ তৈরি করে?

নাসিম বিশ্বাস: আমরা ২০০৫ সাল থেকে কাচশিল্পে যুক্ত। নাসির গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রয়াত নাসির উদ্দিন বিশ্বাসের প্রচেষ্টায় ময়মনসিংহের ভালুকায় সেই সময় কারখানা চালু হয়। দেশের গ্রাহকের জন্য আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে কাচকে ভোক্তার সামনে নানাভাবে বাজারে আনছে নাসির গ্রুপ। আমরা আমাদের আধুনিক কারখানায় গ্লাস ও গ্লাসসম্পৃক্ত সব ধরনের পণ্যই উৎপাদন করছি। স্বচ্ছ, রঙিন, রিফ্লেকটিভ, টেম্পারড, শব্দনিরোধক, আয়নাসহ বিভিন্ন ধরনের কাচ উৎপাদন ও বিক্রি করছি আমরা। আমরা নির্মাণশিল্পের জন্য উপযোগী নানান গ্রেডের কাচ তৈরি করছি। বিভিন্ন আবাসনকে গুরুত্ব দিয়ে ইন্টেরিয়র গ্লাস তৈরি করছি। এ ছাড়া ব্যবহারের জন্য মিরর বা আয়না আমরা তৈরি করছি। আয়নার ক্ষেত্রে উচ্চশ্রেণির বেলজিয়াম মিরর, আবার সাধারণ ক্রেতার কথা বিবেচনা করে অ্যালুমিনিয়াম মিরর আমরা তৈরি করছি। কালার্ড গ্লাসে ইদানীং আমরা বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। একই সঙ্গে রিফ্লেকটিভ প্রযুক্তির কাচ তৈরি করছি আমরা। এসব কাচ প্রায় ৪০ শতাংশ তাপমাত্রা প্রতিরোধী। আমরা গ্রিন বিল্ডিং গ্লাস (জিবিজি) কাচও তৈরি করছি।

প্রথম আলো:

কাচ তৈরিতে কী কী উপাদান ব্যবহার করেন?

নাসিম বিশ্বাস: আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানের কাচ তৈরির জন্য উন্নত মানের কাঁচামাল ব্যবহার করছি দীর্ঘদিন ধরেই। সিলিকা স্যান্ড, সোডা অ্যাশ, ডলোমাইট ও লাইমস্টোনের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন কাচ তৈরি করছি। মান ও ধরনভেদে এসব কাচে উপাদানের রাসায়নিক পরিবর্তন থাকে। রঙিন কাচের জন্য আমরা রঙিন উপাদান ব্যবহার করছি। এ ছাড়া মিরর বা আয়নার জন্য আমরা বিশেষ ধরনের কোটিং ব্যবহার করি।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশে কাচের বাজার কত বড়, নাসির ফ্লোট গ্লাসের বাজারে অংশীদারত্ব কত?

নাসিম বিশ্বাস: বাংলাদেশের কাচের বাজার আর্থিকভাবে অনেক বড় বলা যায়। এই বাজারে দেশীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে নাসির ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি দারুণভাবে কাজ করছে। স্থানীয় উৎপাদকদের মধ্যে ঢাকার গ্রাহকদের চাহিদা বেশি পূরণ করছে আমাদের প্রতিষ্ঠান। নাসির ফ্লোট গ্লাস ইন্ড্রাস্ট্রি দেশীয় কাচশিল্পের বিশাল একটি অংশ দখল করে রেখেছে। গ্রাহকের চাহিদা ও প্রয়োজন বুঝে আমরা ইউরোপীয় প্রযুক্তি ও চীনা প্রকৌশল দক্ষতা ব্যবহার করে কাচশিল্পের পরিধি বাড়ানোর জন্য কাজ করছি।

প্রথম আলো:

বিশেষ কাচ কী কী তৈরি করেন?

নাসিম বিশ্বাস: আমরা দেশের মানুষের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিয়ে সব ধরনের কাচ তৈরি করছি। আমরা গাড়ির উইন্ডশিল্ড তৈরি করছি। ডাবল গ্লেজ গ্লাস তৈরি করছি আমরা। দুই স্তরের টেকসই এই কাচ শহরাঞ্চলে বেশি জনপ্রিয়। এ ছাড়া আলো ও তাপপ্রবাহের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এমন কাচ তৈরি করছি আমরা। ঘরবাড়ি বা অফিস–আদালতের কোন জায়গায় কাচের মাধ্যমে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত তাপমাত্রা ও সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়, এমন কাচ আমরা তৈরি করছি। কাচ তৈরিতে আমরা সর্বাধুনিক ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার করছি বলে গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারছি। এ ছাড়া আমরা হাল আমলের বেশ জনপ্রিয় অটো ফ্রস্ট গ্লাস তৈরি করছি। এই কাচকে অস্বচ্ছ দেয়াল হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

প্রথম আলো:

কাচশিল্পে প্রধান প্রতিবন্ধকতা কী, এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?

নাসিম বিশ্বাস: বাংলাদেশের কাচশিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির ফলে কাচের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী হিসেবে কাচের ব্যবহার বাড়ায় এ শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। যদিও এক বছর ধরে কাচশিল্পের বাজার ও রপ্তানি কিছুটা কমেছে। এই শিল্পের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীলতা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সরকারি নীতিমালা এই শিল্পবান্ধব হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি আমরা। দেশীয় শিল্প হিসেবে এই খাত কর্মসংস্থান তৈরি করছে ও দেশীয় চাহিদা পূরণের জন্য কাজ করছে। এই শিল্পের বিকাশে শিল্পবান্ধব নীতির জন্য প্রশাসনের প্রতি আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এই শিল্পে ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই কর্মসংস্থান আরও বাড়বে। রপ্তানি বাড়লে আমাদের কাজের ক্ষেত্র বড় হবে।

প্রথম আলো:

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

নাসিম বিশ্বাস: আমরা ভবিষ্যতে দেশের বাজারের চাহিদা মিটিয়ে আরও কাচ রপ্তানি করতে চাই। বর্তমানে ভারতে আমাদের কাচ রপ্তানি হচ্ছে। এই বাজার আমরা আরও বড় করতে চাই।