আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে

সালেহউদ্দিন আহমেদ

নীতি সুদহার কমিয়ে-বাড়িয়ে বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। নীতি সুদের হার বাড়ানো একটা গতানুগতিক বিষয়। দেশের ৫০-৬০ শতাংশের বেশি মানুষ ব্যাংক ব্যবস্থার মধ্যে নেই। ফলে রেট বাড়িয়ে–কমিয়ে কি কাজ হবে? এটা তো পশ্চিমা দেশ নয় যে শতাভাগ মানুষ ব্যাংকে লেনদেন করেন। সেখানে অল্প সুদহার কিংবা বিনিময় হার বাড়লে-কমলে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। আমাদের এখানকার মানুষ মোবাইলে আর্থিক লেনদেন করেন। অনেকে আবার সঞ্চয়পত্র কিনে থাকেন। এসবের সঙ্গে রেটের (নীতি সুদহার) কোনো সম্পর্ক নেই।

মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ কমালে চাহিদা কিছুটা কমবে। তবে শর্ত থাকতে হবে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে ঋণপ্রবাহ যেন না কমে। বরং তা বাড়াতে হবে। প্রয়োজন হলে বৃহৎ শিল্পে ঋণপ্রবাহ কমিয়ে তাদের পুঁজিবাজারে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

অনিয়মের কারণে ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে। ইসলামি ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকেরা এমনিতে টাকা রাখতেন। তাদের টাকা ধার নেওয়ার জন্য কলমানিতে যাওয়া লাগত না। এখন ধার করতে হচ্ছে। আস্থা কমে যাওয়ায় এমনটা হচ্ছে। গ্রাহকের আস্থা পুনরুদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ না থাকাটা মুদ্রানীতির বড় দুর্বলতা। নীতি সুদহার নিয়ে বেশি উচ্চবাচ্যের কারণে বিষয়গুলো আড়ালে পড়ে গেছে। অবশ্য ২০০৬ সালেই আমরা নীতি সুদহার বাড়ানোর মতো ব্যবস্থা নেওয়া চালু করেছিলাম। এখন অনিয়মের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে, কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে, সেগুলো দরকার ছিল। শুধু রেট কিংবা অঙ্কের হিসাব দিয়ে লাভ হবে না।

এখন গতানুগতিক মুদ্রানীতির বাইরে গিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। ডলারের বিনিময় হার ও আমদানি ব্যয় কমাতে হবে। আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। সার্বিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক একা কাজগুলো করতে পারবে না, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরকে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।


সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক