২৬ বছর পূর্ণ করে ২৭ বছরে পা রাখছে এমটিবি। কিছুদিন আগে আপনারা ব্যাংকের লোগো পরিবর্তন করলেন। পাশাপাশি প্রযুক্তিভিত্তিক সেবার নামও পরিবর্তন করলেন। কেমন সাড়া পাচ্ছেন।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: এ লোগো উন্মোচন ও ব্র্যান্ডিং করার আগে আমরা বাজার যাচাই করি। আমরা মার্কেটিং কোম্পানিগুলোকে লিখেছিলাম, ভালো ব্যাংকের কথা এলে আমাদের নামটা গ্রাহকেরা বলেন কি না। দেখলাম, শুরুতে বলছেন না। তবে এমটিবির নাম বললে ভালো ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। সেখান থেকে আমরা লোগো পরিবর্তন ও নতুন করে ব্র্যান্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিই। আগে আমরা কখনো ব্র্যান্ডিং বা পণ্যের প্রসার নিয়ে আগ্রাসী ছিলাম না। নতুন করে ব্র্যান্ডিং করতে গিয়ে পুরো বাংলাদেশে আমাদের প্রচার করতে হয়েছে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ লোগোর মধ্যে সবুজ ও লাল দেখা যায়। দেশের মানুষের বড় অংশ এখন তরুণ। তাঁদের প্রাধান্য দিয়েই নতুন লোগোটা করলাম। বাজারে ভালো সাড়া পেলাম। এখন মানুষ এমটিবিকে আলাদা করে চিনতে পারছেন ও বিবেচনা করছেন। এরপর আমরা এমটিবির অ্যাপ ও রিটেইল ব্যবসায় ভালো প্রবৃদ্ধি দেখছি।
এমটিবির উদ্যোক্তারা দেশের ভালো ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। এখন দ্বিতীয় প্রজন্ম ব্যাংকটির পর্ষদে রয়েছে। তাতে নীতি–কৌশলে কোনো পরিবর্তন আসছে কি?
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান : এটা সত্যি যে বাংলাদেশের শীর্ষ পেশাদার ব্যবসায়ীরা আমাদের ব্যাংকের উদ্যোক্তা। এখন তাঁদের দ্বিতীয় প্রজন্ম পর্ষদে যুক্ত হচ্ছে। স্কয়ার টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান তপন চৌধুরী ও অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। স্বতন্ত্র পরিচালক হয়েছেন জারিন মাহমুদ হোসেন। তাঁরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ। দেশ পরিচালনারও অভিজ্ঞতা আছে কারও কারও। দেশের ব্যবসা–বাণিজ্যের নীতিনির্ধারণেও তাঁদের ভূমিকা রয়েছে। তবে আমাদের পর্ষদের সদস্যরা ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন না। আমাদের কোনো পরিচালককে ব্যাংকের কাজে কখনো বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারের কাছে যেতে হয়নি। তাঁরা মনে করেন, এসব দায়িত্ব ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের। তাঁরা শুধু পরিচালনা পর্ষদের সভায় কোনো বিষয় উঠলে সেগুলোর ব্যাপারে মতামত দেন। পর্ষদ সদস্যরা সবাই খুব অভিজ্ঞ হওয়ায় তাঁরা সহজেই সময়োপযোগী মতামত দেন, যা ব্যাংকের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখছে।
গত বছর দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এক বছর পেরিয়ে গেল। আপনাদের ব্যাংকের ঋণ আদায়, বিতরণ ও আমানতে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে কি? ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: সরকার পরিবর্তনের আগে থেকে আমাদের ব্যাংকের আমানত উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়তে শুরু করেছিল। কারণ, পটপরিবর্তনের আগে থেকেই ব্যাংক খাতে নানা সমস্যা দেখা দেয়। তখন সরকার টাকা ছাপিয়ে বেশকিছু ব্যাংককে দিয়েছে। গ্রাহকেরা তখনই খারাপ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আমাদের মতো ভালো ব্যাংকে স্থানান্তর শুরু করেন। এই ধারা এখনো অব্যাহত আছে। অন্যদিকে ঋণের প্রবৃদ্ধি খুবই কম, ৬ শতাংশের মতো। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে ঋণ কমে গেছে। অন্যসব ব্যাংকের মতো আমরাও সরকারি বিল-বন্ডে টাকা খাটিয়ে আয় করছি। এ সময়ে খেলাপি ঋণ সব ব্যাংকের বেড়েছে, আমাদেরও বেড়েছে। এটা মূলত ঋণের নীতিমালা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কারণে। এ ছাড়া কিছু পুরোনো ঋণ ছিল, যা খেলাপি হয়ে আছে। আমাদের সুবিধা হলো সরকার পতনের পর যাঁরা জেলে বা পালিয়ে গেছেন, তাঁরা আমাদের গ্রাহক না। এ ছাড়া আমরা কখনো কোনো ঋণের প্রকৃত চিত্র গোপন করিনি, এখনো গোপন করছি না।
সামনে আমরা ব্যাংকের মূলধন বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি। আশা করছি, নির্বাচন হয়ে গেলে প্রবৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি হবে। আমরা কটেজ, ক্ষুদ্র ও ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণে নজর বাড়িয়েছি। প্রযুক্তিনির্ভর ফিনটেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঋণ বাড়াতে কাজ করছি। সামনে মোবাইল অপারেটরগুলো ডিজিটাল আর্থিক সেবায় আসবে, তখন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছে ঋণ পৌঁছানো আরও সহজ হবে। এ ছাড়া আমাদের রিটেইল বা খুচরা ঋণ বাড়ছে। আবাসন ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডে আমাদের ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। বিজনেস সেগমেন্ট কার্ডে আমরা এখন বাজারের সেরা। দেশের সব কটি বিমানবন্দরে আমরা লাউঞ্জ চালু করেছি। আমরা সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের যথাযথ ব্যবহার করছি, যাতে সমাজে গুণগত পরিবর্তন আসে।
গত সরকারের মেয়াদে লুটপাট হওয়া পাঁচ ব্যাংক একীভূত করা হচ্ছে। কতটা সফল হবে এই উদ্যোগ।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: ব্যাংক একীভূত পৃথিবীর সবখানে হয়। এটা করতে সমস্যা নেই। বিষয়টা হলো কতটা সফলভাবে এই উদ্যোগ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। এখন পর্যন্ত আমরা পরিষ্কার কোনো ধারণা পাইনি। প্রশ্ন হলো পাঁচ ব্যাংকের এত শাখা, জনবল ও ৮০ শতাংশের মতো খেলাপি ঋণের কী হবে। আবার যদি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি করা হয়, তারা এসব সম্পদের কত দাম দেবে। এসব প্রশ্নের উত্তর মিললেই বোঝা যাবে কতটা সফল হবে এই উদ্যোগ। তবে যেভাবে ব্যাংকগুলো খারাপ করে ফেলা হয়েছে, তাতে আমাদের সামনে খুব বেশি বিকল্প নেই।
ব্যাংক খাতে ডলারের সমস্যার তো সমাধান হয়ে গেল। নাকি বিনিয়োগ পরিবেশ ফিরে এলে আবার শুরু হবে।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: আমি মনে করি, ডলার এখন আর সমস্যা না। আমাদের চলতি হিসাব, আর্থিক হিসাব ও লেনদেন ভারসাম্য—সবকিছুর উন্নতি হয়েছে। রিজার্ভ ১৫ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ২৬ বিলিয়ন হয়েছে। প্রবাসী আয় ভালো আসছে। ফলে আমদানি আরও এক-দুই বিলিয়ন বাড়লেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যদি না আবার অর্থ পাচার শুরু হয়।