শ্রম আইন সংশোধন করে সরকার যে অধ্যাদেশ জারি করেছে, সেটি দেশের শ্রম খাতের ইতিহাসে বড় ঘটনা। গণ-অভ্যুত্থানের কারণে শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশটা হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে শ্রমিকেরা ছিলেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক।
শ্রমিক-মালিক-শিক্ষক-গবেষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই দীর্ঘ সময় শ্রম সংস্কার কমিশন ও ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক পরিষদে (টিসিসি) আমরা আলাপ-আলোচনা ও তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়ে শ্রম আইনের এই সংশোধনে পৌঁছাতে পেরেছি। সাধারণত দেখা যায়, কোনো আইন করার আগে একটি পক্ষের বেশি প্রভাব থাকে কিংবা সব পক্ষ মিলে এক পক্ষ হয়ে যায়। তবে শ্রম আইনের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। কিছু কিছু জায়গায় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দিন শেষে সংশোধিত শ্রম আইন শ্রমিক ও শ্রম খাতের বিকাশের জন্য একটি বড় অগ্রগতি।
শ্রম আইন সংশোধনে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। তার মধ্যে আছে পাঁচ বছরের পরিবর্তে তিন বছর পরপর মজুরি পুনর্নির্ধারণ। ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন সহজ করা হয়েছে। আগে ২০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি লাগত। এখন সেটি সংখ্যায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ বাড়বে। নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়িয়ে ১২০ দিন করা হয়েছে। যদিও আমরা মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করার দাবি করেছিলাম।
শ্রম আইনে কী কী পরিবর্তন এসেছে, তা নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচার চালাতে হবে। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের সময়ে চর্চাও শুরু হওয়া দরকার। এ জন্য আইন বাস্তবায়নে শিগগিরই নতুন বিধিমালা করতে হবে। কিছু বিষয়ে শিল্পমালিকদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। তবে শিল্পমালিকদের সংশয়ের কিছু নেই। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সবাইকেই দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। তাহলেই বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসবে।
মজুরি পুনর্নির্ধারণ তিন বছর পরপর করার কারণে শ্রমিকেরা সুফল পাবেন। দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকেরা পাঁচ বছরের পরিবর্তে তিন বছর অন্তর মজুরি মূল্যায়নের দাবি করছিলেন শ্রমিকেরা। কারণ, যে মজুরি তাঁরা পান, তা দিয়ে তাঁদের জীবন চলে না। মজুরি নিয়ে নতুন বিধানটি শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
তাসলিমা আখতার সভাপ্রধান, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি