সাক্ষাৎকার: বিজিএমইএর নির্বাচন

চেষ্টা থাকবে ব্যবসা বাড়ানোর

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পর্ষদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। নির্বাচনে তিনটি জোট থাকলেও ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। পোশাকশিল্পের চ্যালেঞ্জ, বিজিএমইএতে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন সম্মিলিত পরিষদের দলনেতা মো. আবুল কালাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভংকর কর্মকার। 

প্রথম আলো:

ভোটারদের আপনারা কী ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন?

আবুল কালাম: বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত তৈরি পোশাকশিল্পের যে উন্নয়ন হয়েছে, তার অধিকাংশই সম্মিলিত পরিষদের হাত ধরে হয়েছে। এ কারণে আমরা অন্যদের তুলনায় সব সময় ভোটারদের কাছে এগিয়ে থাকি। বর্তমানে দেশে গ্যাস-সংকট, কাস্টমসের হয়রানি, বন্দরে জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। এসব থেকে আমরা মালিকদের রেহাই দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে সে দেশের বাজারে ব্যবসার গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। সে কারণে আমরা নির্বাচনে জয়ী হলে নতুন বাজার অনুসন্ধানে সচেষ্ট হব। পাশাপাশি সরকার ও মার্কিন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে ট্রাম্পের শুল্ক কমানোর দর-কষাকষিতে যুক্ত হব। সব মিলিয়ে আমাদের চেষ্টা থাকবে তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের ব্যবসা বাড়ানো।

প্রথম আলো:

ভোটার তালিকা নিয়ে আপনাদের মধ্যে কোনো ক্ষোভ আছে?

আবুল কালাম: আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই। তবে আমাদের অনেক বন্ধুবান্ধব ভোটার হতে পারেননি। তার মধ্যে কিছু কারখানা চলছে; আবার অনেকগুলো বন্ধ রয়েছে। ব্যাংকিং সমস্যা, শ্রম অসন্তোষসহ বিভিন্ন কারণে কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ভোটার হতে পারেনি, এমন ৩০০-৪০০ কারখানার অস্তিত্ব রয়েছে। আগে বার্ষিক চাঁদা পরিশোধের পাশাপাশি হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর রিটার্ন জমা ও কলকারখানা অধিদপ্তরের সনদ থাকলেই ভোটার হয়ে যেত। প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার পর ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই কঠিন করেছেন। ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়াটি গত রোজার সময় হয়েছিল। তখন মালিকেরা ঈদ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। সে কারণে অনেকে সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ভোটার হতে পারেননি।

প্রথম আলো:

দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ আছে, ছোট কারখানার মালিকেরা বিজিএমইএতে যথাযথ সম্মান ও সেবা পান না। নির্বাচনে জয়ী হলে আপনারা এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেবেন?

আবুল কালাম: সম্মিলিত পরিষদ আমজনতার দল। আমরা সব সময় ছোট কারখানার মালিকদের বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। আমরা নির্বাচনে জয়ী হলে তাঁদের সেবা প্রাপ্তি মসৃণ করব। পাশাপাশি এমন কিছু উদ্যোগ নেব, যাতে ছোট কারখানার মালিকেরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবেন যে বিজিএমইএতে তাঁর অংশীদারত্ব আছে। এ ছাড়া আমরা বিজিএমইএতে অনিয়ম-দুর্নীতির কথা শুনতে পাই। আমরা দুর্নীতিমুক্ত বিজিএমইএ গড়ে তুলব। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেলে চাকরিচ্যুতিসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রথম আলো:

সম্মিলিত পরিষদ বিজিএমইএতে অধিকাংশ সময় নেতৃত্ব দিয়েছে। এ সময় আর্থিক অনিয়মের ঘটনাও ঘটেছে—এমন অভিযোগও রয়েছে অনেকের। এ বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী?

আবুল কালাম: এক দশকের বেশি সময় আমি বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদে ছিলাম না। সেহেতু আর্থিক অনিয়ম আছে কি না, আমার জানা নেই। তবে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আমার কাছে কোনো অভিযোগ এলে সেটি যথাযথ তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। আরেকটি কথা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আমি বা আমাদের দলের কাউকে ভবিষ্যতে আর্থিক কোনো অনিয়ম করার সুযোগ দেওয়া হবে না।

প্রথম আলো:

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিজিএমইএর সাবেক নেতৃত্ব, বিশেষ করে সম্মিলিত পরিষদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেকে পালিয়ে গেছেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

আবুল কালাম: গত ৫ আগস্টের পর মামলার তালিকায় সম্মিলিত পরিষদের অনেকেই আছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের। তাঁরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। এই ব্যবসায়ীদের জন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। ওনারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, যাঁরা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং পতিত সরকারের দালাল নন, তাঁদের হয়রানি করা হবে না।

প্রথম আলো:

আপনার প্যানেলে মামলার আসামি কেউ কি প্রার্থী হয়েছেন?

আবুল কালাম: আমার জানামতে, কেউ নেই।

প্রথম আলো:

অতীতে অনেকেই বিজিএমইএর প্ল্যাটফর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। আপনিও কি সেই পথেই হাঁটবেন?

আবুল কালাম: আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দল থেকে আমি সর্বোচ্চ সম্মান পেয়েছি। তাই বিজিএমইএকে ব্যবহার করে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

প্রথম আলো:

নির্বাচনে জয়ী হলে কেমন বিজিএমইএ গড়বেন?

আবুল কালাম: আমরা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক বিজিএমইএ গড়তে চাই। মালিকেরা যেন মনে করেন, বিজিএমইএ তাঁর অধিকার, বাড়ি ও নিজস্ব সম্পদ। এই বিশ্বাসটা আমি মালিকদের মধ্যে স্থাপন করতে চাই। কারণ, যখন মালিকেরা সংগঠনকে নিজের মনে করবেন, তখন পুরো খাত সব প্রতিকূলতা ঠেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।