সব খাতে কমাতে হবে আমদানি

আহসান এইচ মনসুর
ছবি: সংগৃহীত

মূল্য বাড়ানোর পরিবর্তে রেশনিং করে ব্যবহার কমানোর সিদ্ধান্তের দিকে গেছে সরকার। এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। বড় শহরের কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ করা হলেই জেনারেটর চালু হবে।

শিল্পকারখানার ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি হবে। এতে ডিজেলের ব্যবহার বাড়বে। ছোট আকারের জেনারেটর তেমন দক্ষ হয় না। তাই জ্বালানি তেল আরও বেশি খরচ হবে। এর মানে হলো সরকারি পদক্ষেপে তেমন কোনো লাভ হবে না।

সুতার মিলে এক বেলা বিদ্যুৎ না থাকলে ১৮ হাজার টাকার ডিজেল লাগে। অথচ এ টাকা খরচ করে পাঁচ দিনের বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। তাই লোডশেডিংয়ের ফলে ব্যক্তি খাতে খরচ বেড়ে যাবে। এ ছাড়া ব্যক্তি খাতে ব্যবহার বাড়ায় সরকারের ডিজেল আমদানি আরও বেড়ে যাবে। আর পেট্রলপাম্প এক দিন বন্ধের সিদ্ধান্ত শুধু ভোগান্তি তৈরি করবে, হয়রানি বাড়াবে; তেলের ব্যবহার কমাবে না। মানুষ আগের দিন তেল কিনে পরের দিন চালাবে। আমদানি বাড়লে জাতীয় খরচ বেড়ে যাবে। বৈদেশিক মুদ্রা আর সাশ্রয় হবে না।

আটটার পর দোকান, বিপণিবিতান বন্ধের সিদ্ধান্ত ভালো, এতে সাশ্রয় হবে। উপাসনালয়ে প্রার্থনা ছাড়া বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ভালো সিদ্ধান্ত। এগুলো রাজনৈতিক মাধ্যমে প্রচার করতে হবে। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে ব্যবহার কমানোর বিষয়ে।

গ্রাম এলাকায় ব্যবহার কমানোর বিষয়টি কাজ করতে পারে, যেখানে জেনারেটর নেই। বড় শহরে এটি কাজে দেবে না। শহরের মানুষ বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে আপত্তি করবে না। ব্যবহার কমানোর চেয়ে দাম বাড়ানো ভালো সমাধান হতে পারত। সরকার দাম বাড়িয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারত। দাম বাড়ানো হলে ভোক্তাও ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতো। ১০ শতাংশ দাম বাড়ানোর দিকে যেতে পারত সরকার। এতে ভোক্তা সংযমী হতো। বিদ্যুৎ উৎপাদনও ধরে রাখা যেত।

দাম বাড়লে কিছুটা মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। সরকারকে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ভাবতে হবে। মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশ মুদ্রানীতিকে ব্যবহার করছে। বাংলাদেশেরও এটা করা উচিত। সুদের হার বাড়াতে পারে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান স্থিতিশীল করতে হবে। ব্যাংক ও খোলাবাজারের মধ্যে ডলারের বিনিময় হার কমিয়ে আনতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমানো যাবে না, এটি আরও বাড়াতে হবে। তাই শুধু জ্বালানি নয়, সব খাতে আমদানি কমাতে হবে।

এর বাইরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে সরকার বোঝাপড়ায় যেতে পারে। এর জন্য হয়তো বেশ কিছু সংস্কার করতে সরকারের প্রস্তুত হতে হবে।

তবে আগামী এক মাসের মধ্যে বিশ্ব মন্দা আরও প্রকট হতে পারে। এতে জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমে আসবে। ইতিমধ্যেই ভোজ্যতেলের দাম অনেক কমেছে, আরও কমবে।

জ্বালানি তেলের দাম কমছে, তুলার দাম কমছে, গমের দাম কমছে। জ্বালানির দাম কমে গেলে আর সরকারের বিপদ থাকবে না। দু-এক মাসের মধ্যে সুবাতাস বইতে পারে।

আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট