সুদহার বাড়ালে আমানত সংগ্রহ সহজ হবে

বেসরকারি খাতের মার্কেন্টাইল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ২৪ বছর পূর্ণ করছে আগামী ২ জুন। ডলার, টাকা–সংকটসহ ব্যাংক খাতের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও গত ২৪ বছরের মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নানা অর্জন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল ইসলাম চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সানাউল্লাহ সাকিব

কামরুল ইসলাম চৌধুরী
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ব্যাংক খাত বেশ কিছুদিন ধরে টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আপনাদের ব্যাংকের অবস্থা কী?

কামরুল ইসলাম চৌধুরী: করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য আগের চেয়ে কম হয়েছে। নানা কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রি কমে গেছে, চাহিদায়ও টান লেগেছে। ফলে ঋণ আদায়ও কম হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই সময় নানা নীতিসুবিধা দিয়ে ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করেছে। এখন ঋণ আদায় করা ব্যাংকের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরও ২০২২ সালে আমরা ভালো ঋণ আদায় করেছি। অবলোপন করা ঋণও আদায় হয়েছে। তাই চলতি বছরে ঋণ আদায়ে আরও বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। আশা করছি, সব কর্মীর সহায়তায় সেই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: এক বছর ধরে দেশে ডলার–সংকট চলছে। চাহিদামতো পণ্য আমদানি করতে না পারায় অনেকে ব্যবসা ছোট করে এনেছে। এই সংকটের প্রভাব আপনাদের ওপর কতটা পড়েছে?

কামরুল ইসলাম চৌধুরী: গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্য ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যায়। এর ফলে ডলারের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গিয়ে সংকট তৈরি হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে ও বাংলাদেশ ব্যাংক এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ নেয়। তবে শিল্পের কাঁচামালের ঋণপত্র খুলতে সমস্যা হচ্ছে না।

আমদানিনির্ভর দেশ বলে সব পণ্য আমদানি করতে হবে, তার কোনো দরকার নেই। তাই আমদানি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটা ঠিক আছে।

কড়াকড়ি আরোপের ফলে বিলাসপণ্য আমদানি কমে এসেছে। এ জন্য গভর্নরকে ধন্যবাদ জানাই। পণ্যের দাম দেখতে গিয়ে অনেক ব্যাংকের মতো আমাদেরও কয়েকটি ঋণপত্র বাতিল করা হয়েছে। তবে এখন ডলার–সংকট কমে এসেছে। আশা করছি, দ্রুত ডলার–সংকটের সমস্যা নিরসন হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ডলার–সংকটের কারণে ব্যাংকে তারল্যসংকটও দেখা দিয়েছিল। সেই পরিস্থিতির কী সমাধান হয়েছে?

কামরুল ইসলাম চৌধুরী: ব্যাংকগুলোকে আমদানি দায় মেটাতে গিয়ে ডলার কিনতে হয়েছে। এর ফলে টাকার চাহিদা বেড়ে যায়। তারল্য পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আমরাও ধীরে ধীরে আমানতের সুদহার বাড়াচ্ছি। এখন ৭ থেকে সর্বোচ্চ সোয়া ৭ শতাংশ সুদে আমানত নিচ্ছি আমরা। বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুলাই থেকে সুদহার বাড়াবে বলে জানিয়েছে। সুদহার বাড়ালে ব্যাংকগুলোর জন্য খুব ভালো হবে। তাতে সহজ হবে আমানত সংগ্রহ করা। আমানতকারীরা আবারও ব্যাংকে টাকা রাখতে আগ্রহী হবেন। আমানত বাড়তে থাকলে তাতে তারল্যসংকটও কেটে যাবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: গত ২৪ বছরে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মূল অর্জনগুলো কী কী?

কামরুল ইসলাম চৌধুরী: বর্তমানে ১৫২টি শাখা ও ৩৫টি উপশাখা নিয়ে আমরা ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছি। প্রান্তিক জনপদে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে এরই মধ্যে ১৮৭টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট চালু করা হয়েছে। ব্যাংকের নিজস্ব এটিএম বুথের সংখ্যাও ১৯৫। এ সময়ের মধ্যে প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি শরিয়াহভিত্তিক ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রমও চালু করেছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৯ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা আমানত জমা হয়েছে আমাদের ব্যাংকের। তার বিপরীতে ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ২৮ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। গত বছরে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৭১৪ কোটি টাকা। গত বছর রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা ও আমদানি ২০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। গত বছর প্রবাসী আয় আসে ৬ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: চলতি বছর মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নতুন পরিকল্পনা কী?  

কামরুল ইসলাম চৌধুরী: প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে মিল রেখে আমরা স্মার্ট ব্যাংকিং করব। ইতিমধ্যে তা শুরুও হয়ে গেছে। রেইনবো অ্যাপ ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা মাইক্যাশে আমরা ভালো গ্রাহক পাচ্ছি। ঘরে বসে হিসাব খুলে বিল পরিশোধ, টাকা পাঠানো, জমাসহ নানা সুবিধা নিচ্ছেন গ্রাহকেরা। দিনে দিনে এসব সেবার ব্যবহার বাড়ছে। এ ছাড়া চলতি বছর বজ্রপাত কমাতে বিশেষ যন্ত্র স্থাপন, কৃষি যন্ত্রপাতি, বীজ ও কৃষি গবেষণায় আমরা অর্থ বিতরণ করব। ইতিমধ্যে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্য অর্জন করেছি আমরা। তারপরও কৃষিঋণ দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, কোনো জমি যেন খালি পড়ে না থাকে। এ জন্য আমরা কৃষি খাতে বিশেষ নজর দিয়েছি।

আমাদের নতুন পরিকল্পনার মূলে রয়েছে গ্রাহককেন্দ্রিক সেবার মান বাড়ানো,পরিচালনদক্ষতা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং ডিজিটাল রূপান্তর। তা ছাড়া মানসম্পন্ন সম্পদ বৃদ্ধির মাধ্যমে ঝুঁকি ও মুনাফার মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাংকের অবস্থান আরও সুসংহত করার প্রয়াস চালিয়ে যাব। এ ক্ষেত্রে রিটেইল আমানত বৃদ্ধির পাশাপাশি করপোরেট আমানতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার ওপর জোর দেব।

২০২৩ সালে ব্যাংকের প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি শেয়ারধারীদের সন্তোষজনক লভ্যাংশ প্রদান ও মন্দ ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।