বিশ্ববাজারে হস্তশিল্প অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তবে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বিশাল এ বাজারে আমরা সেভাবে হিস্যা বাড়াতে পারছি না। দেশের অভ্যন্তরে ও রপ্তানি—দুই জায়গায়ই আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এর অন্যতম কারণ হলো, এই খাতের খুব বেশি যত্ন নেওয়া হয় না। হস্তশিল্পজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আগে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ প্রণোদনা দেওয়া হতো। সেটি দুই ধাপে কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। এই খাতের উদ্যোক্তারা তুলনামূলক ছোট পুঁজির। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে কাঁচামালের সংকট, ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রণোদনা না বাড়ালে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা যাবে না।
হস্তশিল্প একটি বিশেষায়িত খাত। এখানে নিয়মিত পণ্যের মান উন্নয়ন ও গবেষণার প্রয়োজন। অথচ স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত হস্তশিল্পের বিকাশে দেশে বড় কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। এ খাতের উদ্যোক্তারা দীর্ঘদিন ধরে একটি জাতীয় হস্তশিল্প গবেষণা ও নকশাকেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও জমি বরাদ্দের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
আমাদের হস্তশিল্পীরা সারা দেশে ছড়িয়ে আছেন। তাঁদের পণ্য তৈরি, প্রদর্শন ও বিপণনের জন্য সাধারণ কোনো প্লাটফর্ম নেই। তাই এ খাতের জন্য একটি কারুপল্লি স্থাপনের দাবি বহুদিনের। দেশে কারুপল্লি না থাকায় দেশি-বিদেশি ক্রেতারা একই স্থান থেকে হস্তশিল্পজাত পণ্য বাছাই ও ক্রয়াদেশ দিতে পারছেন না। ফলে এর বাজারও বড় হচ্ছে না।
তৈরি পোশাক খাতের মতো হস্তশিল্পও দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত হতে পারে। তবে এর জন্য নিয়মিত গবেষণা ও পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন জরুরি। শিল্পীদের দক্ষতা বাড়াতে প্রয়োজনে ভিয়েতনাম, চীন ও ভারত প্রভৃতি দেশ থেকে প্রশিক্ষক এনে তাঁদের শেখাতে হবে। আর সার্বিকভাবে স্কুল পর্যায় থেকেই হস্তশিল্পের কাজের বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।