কর্মসংস্থান বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ থাকতে হবে

আগামী ২ জুন ঘোষিত হতে যাচ্ছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের এটিই প্রথম বাজেট। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে বাজেটকে ঘিরে তাই বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশাও বেশি। তাঁরা চান ব্যবসা-বাণিজ্যের পথে যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলো দূর করার দিকনির্দেশনা থাকবে বাজেটে। বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের বাজেট প্রত্যাশা নিয়েই এবারের মূল আয়োজন।

সর্বশেষ গত দুই–তিন বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ও দেশীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এই সংকটের কারণে মানুষের খরচ করার সামর্থ্য ও প্রত্যাশা উভয়ই কমে গেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে হিমশিম খাওয়া সাধারণ মানুষ এখন সবজি, ফল ও আমিষ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। আমরা দেখছি, মানুষের মাথাপিছু ভোগ কমেছে এবং পুষ্টির ঘাটতি বেড়েছে। এতে নিম্ন, নিম্ন মধ্যম এবং কিছু ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা ভুক্তভোগী হচ্ছেন। ফলে খুচরা বিক্রেতা হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা, আগামী বাজেটে যেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ে। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের পুষ্টির ঘাটতি কমানোর বিষয়টিকেও সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।  

আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানোর উপায় হচ্ছে—যথেষ্ট পরিমাণে কর্মসংস্থান বাড়ানো। আর এ জন্য প্রয়োজন নতুন বিনিয়োগ। বিনিয়োগের মাধ্যমে যেমন ব্যবসা ও শিল্প গড়ে ওঠে, তেমনি কাজের সুযোগও তৈরি হয়। তাতে মানুষের ভোগ বাড়ে, গতি আসে অর্থনীতিতে। আগামী বাজেটে কর্মসংস্থান তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বর্তমানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদ একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এতে বিনিয়োগ প্রবাহ কমে গেছে। যেহেতু গত কয়েক মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে তাই সুদহার কিছুটা কমানো উচিত। বাজেটে এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা প্রত্যাশা করছি।  

দ্বিতীয়ত, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও সরবরাহব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। আধুনিক বাণিজ্যব্যবস্থাকে (মডার্ন ট্রেড) উৎসাহ দিতে বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করতে হবে। সুপারশপ পর্যায়ে কেনাকাটার ওপর ২ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। ভোক্তাদের ওপর যাতে এই ভ্যাটের প্রভাব না পড়ে সে জন্য ২ শতাংশ ভ্যাট নিজেরা বহন করে। তাই সুপারশপগুলোর জন্য কিছু প্রণোদনার ব্যবস্থা করা উচিত। সেটা কীভাবে হবে, সরকার তা ভালো জানে। কারণ, আধুনিক বাণিজ্যব্যবস্থা চালু হলে সরবরাহ শৃঙ্খলে স্বচ্ছতা আসবে, খাদ্যের অপচয় কমবে, কৃষক ন্যায্য দাম পাবে, সরকারেরও তথ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়বে।

খাদ্যপণ্যের অপচয় কমাতে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে সারসহ যেসব জায়গায় ভর্তুকি বিদ্যমান রয়েছে, সেগুলো চলমান রাখা উচিত। একটি জাতীয় ফুড বাফার পলিসি তৈরি করা সময়ের দাবি। সরকার চাইলে এ বিষয়ে আমরা আরও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিতে পারি। বর্তমান সরকার পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে বেশ তৎপর রয়েছে। কিন্তু সেটি তো টেকসই হচ্ছে না। টেকসই করতে হলে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকশিল্প, পাট, সৌরবিদ্যুৎ প্রভৃতি খাতে ভর্তুকি দেওয়া যায় কি না, তা দেখা উচিত।

দ্রুত রাজনৈতিক সরকার এলে সব ঠিক হয়ে যাবে কি না, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত না। তবে সরকারে যে–ই থাকুক, কিছু বিষয় সবাইকেই গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করা উচিত। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, জিডিপির প্রবৃদ্ধি, ব্যাংক খাতের সুশাসন—এগুলো দেখেই বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। তাই আগামী বাজেটে এসব খাতে সংস্কারের বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা দরকার।

সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় বন্ধ করতে হবে। শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রকল্পে অনেক বেশি টাকা খরচ করা উচিত। নারীর নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। দেশের অর্ধেক জনসংখ্যাকে অক্ষম বানিয়ে বা ভীতসন্ত্রস্ত করে কোনো অর্থনীতি দাঁড়াতে পারে না।