প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর দেখতে হবে চীনের ভূ–কৌশলগত অবস্থানের আলোকে। এমনকি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের আলোকেও একে দেখতে হবে। পটভূমির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীন দুটি বিষয় পরিষ্কার করেছে। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এর আগে যখন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন, তখন চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ বা কৌশলগত অংশীদারত্ব ছিল। এখন এটা সর্বাঙ্গীন কৌশলগত সহযোগিতা অংশীদারত্বের পর্যায়ে উন্নীত করা হয়েছে। বৈশ্বিক নিরাপত্তার পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রকে মাথায় রেখে এটা করা হয়েছে। দুটি বিষয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ—রাষ্ট্র পর্যায়ে সম্পর্ক ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক।
চীনের কৌশলের ভিত্তি হলো বৈশ্বিক উন্নয়ন, বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক সভ্যতাসংক্রান্ত উদ্যোগ। এর সঙ্গে আছে ব্রিকস জোট, সাংহাই নিরাপত্তা সংস্থা ও বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা অঞ্চল ও পথ উদ্যোগের মতো বিষয়। বাংলাদেশ এ মুহূর্তে একটি প্রলম্বিত অর্থনৈতিক নিম্নচাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ সফরের সময় বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সহায়তার অঙ্গীকার পাবে, এমনটা বলা হচ্ছিল। আমাদের মনে রাখতে হবে, চীন সেভাবে কাজ করে না। চীন প্রথমে কৌশলগত বিষয়গুলোকে বিবেচনায় আনে। তারপর তার আলোকে সে সিদ্ধান্ত নেয়। কার সঙ্গে কী সম্পর্ক হবে, তার ধরন কী হবে এবং সেই সম্পর্ক কীভাবে বাস্তবায়িত হবে—একটি বড় শক্তি হিসেবে চীন ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কৌশল ঠিক করে।
বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে চারটি উপাদান নির্দিষ্ট করা হয়েছে। অনুদান, সুদবিহীন ঋণ, সহজ শর্তে ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণ—এই চার পদ্ধতিতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার কথা বলেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। এখন দুই দেশের কারিগরি বা টেকনিক্যাল কমিটি আলোচনা করবে কীভাবে এই সহযোগিতা বাস্তবায়ন করা হবে। তারপর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। অর্থাৎ শুরুতে টেকনিক্যাল কমিটি এগুলো নিয়ে কাজ করবে। এর ভিত্তি হবে দুই দেশের সম্পর্কের কৌশলগত যে বিন্যাস, সেটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব রাজনৈতিক, আর চীন উন্নয়নের অংশীদার। আমরা দেখছি, এ ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এই ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা আসলে কাজ করে কি না, সেটা আমাদের দেখতে হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ যখন একটি অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রযেছে। ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থায় বাংলাদেশ যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ কোনো দিকে ঝুঁকে পড়ছে কি না, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। ভারসাম্য রক্ষার নামে বাংলাদেশ বিশেষ কোনো দিকে ঝুঁকে পড়লে চীন তাকে অন্যভাবে দেখবে।
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর
অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ও চেয়ারপারসন, উন্নয়ন অন্বেষণ