কেমন বাজেট চাই
বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ হবে তিনটি
৬ জুন ঘোষিত হতে যাচ্ছে নতুন বাজেট। নতুন বাজেটে কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতেই বা করণীয় কী—এ নিয়ে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো।
আগামী বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ হবে তিনটি। প্রথমত, করহার না বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির প্রবণতা ধরে রাখা। দ্বিতীয়ত, রাজস্ব ব্যয় সংকোচন করে উন্নয়নমুখী বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়ানো। তৃতীয়ত, বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর চাপ না ফেলে বাজেটের ঘাটতি অর্থায়ন করা।
আমরা মনে করি, অর্থনীতির রূপান্তরের সময় যে বিষয়গুলোকে বিবেচনা করা উচিত সেগুলো হচ্ছে—রাজস্ব আদায় ব্যবস্থাপনার সংস্কার, করজাল বৃদ্ধি, স্থানীয় শিল্পায়ন ও শিল্প খাতের উন্নয়ন, অটোমেশন, সহজ ও ব্যবসাবান্ধব আয়করব্যবস্থা, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ। আমরা মনে করি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য একটি পৃথক ও হ্রাসকৃত করব্যবস্থা প্রবর্তন করা যেতে পারে।
করহার বৃদ্ধি করলে আমরা ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ব, ফলে দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ দুটোই বাধাগ্রস্ত হবে। করের হার না বাড়িয়ে কর সম্প্রসারণের সহজ পথ হলো করদাতার সংখ্যা বাড়ানো।
এ জন্য কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও অটোমেশনের কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে বেশিসংখ্যক মানুষ যেন কর দিতে আগ্রহী হন, সেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন করের (মূসক) ক্ষেত্রে ফেরত ও আপিল প্রক্রিয়া এখনো অটোমেশনের আওতায় আসেনি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটা বাস্তবায়ন করতে হবে। কাস্টমস ব্যবস্থাপনা সহজীকরণের লক্ষ্যে অতি দ্রুত বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়নের উদে৵াগ নিতে হবে।
ঘাটতি বাজেটের অর্থায়নে কী উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে, তা আমরা আগামী বাজেটে দেখতে চাই। প্রথাগতভাবে দেখা যায়, ঘাটতি বাজেটের অর্থায়নের জন্য সরকার ব্যাংকব্যবস্থার ওপর বেশি হারে নির্ভর করে থাকে।
এ বছর ঘাটতি বাজেটের অর্থায়নের জন্য ব্যাংকব্যবস্থার ওপর বেশি নির্ভর করা হলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হবে। কারণ, এমনিতেই ব্যাংকগুলোতে তারল্যঘাটতি রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকারি ঋণ যদি অনেকাংশে বেড়ে যায়, তাহলে এই ঘাটতি আরও প্রকট হবে। তাতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিকে চাপে ফেলতে পারে।
আমরা মনে করি, ঘাটতি বাজেট মেটাতে দুটো জায়গায় গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত, পুঁজিবাজার; দ্বিতীয়ত সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রে পিপিপি মডেলের আওতায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ানো। এর ফলে বিশেষ করে অবকাঠামো খাতের বৃহৎ প্রকল্পসমূহে বাজেট বরাদ্দের বাইরের অর্থায়ন সম্ভব হবে।