মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি শিল্পেরও সুরক্ষা লাগবে
প্রথম আলো আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতকে কোথায় দেখতে চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়েছেন নীতিনির্ধারক, ব্যাংকের পরিচালক, ব্যাংকার, বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আজ মঙ্গলবার প্রথম আলো কার্যালয়ে এটি অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের এমডি এ কে আজাদ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে, সেগুলো ঠিক আছে। তবে মূল্যস্ফীতি কমানোর পাশাপাশি শিল্পের সুরক্ষা লাগবে। এমনভাবে মুদ্রানীতি করতে হবে, যাতে শিল্প বাঁচে, ভবিষ্যতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান হয়।
ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করেছেন। এখন ব্যাংকঋণের সুদ সাড়ে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। সুদের হার আরও বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা কীভাবে ঋণের অর্থ পরিশোধ করবেন, সেটি ভাবা উচিত ছিল। অন্যদিকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার কমানো হয়েছে। ইডিএফ রপ্তানিকারকদের জন্য ভর্তুকি হিসেবে কাজ করে। বিকল্প হিসেবে অফশোর ব্যাংকিং ব্যবস্থা থাকলেও সবাই সে সুযোগ নিতে পারবেন না। ফলে রপ্তানি মারাত্মকভাবে কমতে পারে।
বিদায়ী ২০২৩–২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি ২০০ কোটি ডলার কমেছে। বাংলাদেশের রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রে ১১ শতাংশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ৫ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে পার্শ্ববর্তী ভারতের রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রে ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ ও ইইউতে ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমেছে। বৈশ্বিক রপ্তানি কমেছে গড়ে ৫ শতাংশ। তার মানে আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমাদের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। গত পাঁচ বছরে গ্যাসের দাম ২৮৬ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিল সাড়ে ৩৩ শতাংশ, ডিজেল ৬৮ শতাংশ, ন্যূনতম মজুরি ৫৬ শতাংশ, যাতায়াত ৫০ শতাংশ ও জাহাজভাড়া ৩০-৪০ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ পাঁচ বছরে ব্যবসার খরচ ৫০ শতাংশ বেড়েছে। অথচ তৈরি পোশাকের দাম গড়ে সাড়ে ৩ শতাংশ কমেছে। বিজিএমইএর গবেষণা সেলের তথ্যানুযায়ী, টি–শার্টের দাম ৩ শতাংশ, ট্রাউজারের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ ও সোয়েটারে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে।
ভারতের পাঁচটি রাজ্যে কেউ বিনিয়োগ করলে জমি ক্রয়, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ও শ্রমিকদের বেতনের একটি অংশ সরকার দিচ্ছে। কর অবকাশ সুবিধাও আছে। পার্শ্ববর্তী দেশ যখন এসব সুবিধা দিচ্ছে, তখন আমাদের দেশে সুদের হার বাড়ছে। ইডিএফ সুবিধা কমানো হচ্ছে। তাহলে আমরা কীভাবে বিনিয়োগ ধরে রাখব? প্রতিবছর ৩০ লাখ লোক শ্রমবাজারে আসছে। এর মধ্যে ১০ লাখ বিদেশে যাচ্ছে। সরকার ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ ২ হাজারের মতো নিয়োগ হয়। বাকিটা হয় বেসরকারি খাতে। কিন্তু বেসরকারি খাতে কোনো প্রবৃদ্ধি আছে বলে আমার জানা নেই। তাহলে কর্মসংস্থানের জন্য কী ভাবছেন। বিদ্যমান ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য কী চিন্তা করছেন। চলতি বছর তো রপ্তানি আরও ৫০০ কোটি কমবে।
বিদ্যমান ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সুরক্ষা লাগবে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখা হচ্ছে। বিনিময়ে দশমিক ৩ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। ১ শতাংশ উৎসে কর কর্তন বন্ধ করুন। অন্যদিকে ভর্তুকি দেওয়ারও কোনো দরকার নেই। তাহলে অন্তত রপ্তানিকারকেরা স্বস্তি পাবেন। আর ইডিএফ সুবিধা চালু রাখা দরকার। যাতে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে রপ্তানিকারকেরা সমস্যায় না পড়েন।
চলতি বছর ২৭০টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। শ্রম অসন্তোষ চলছে। দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দেখেন আরও কত কারখানা বন্ধ হয়, কত শ্রমিক বেকার হয়।
এ কে আজাদ, সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই ও এমডি, হা-মীম গ্রুপ