আবাসন খাতে আস্থার ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে কনকর্ড

১৯৭৩ সালে যাত্রা শুরু করে আবাসন খাতে নিজেদের সুদৃঢ় অবস্থান তৈরি করেছে কনকর্ড গ্রুপ। সম্প্রতি ৫০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৬ সাল থেকে এই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠাতা এস এম কামালউদ্দিনের ছেলে শাহরিয়ার কামাল। গুলশানের কনকর্ড সেন্টারে গত রোববার তিনি কনকর্ডের দীর্ঘ পথচলা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সানাউল্লাহ সাকিব

প্রথম আলো:

আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠান কনকর্ড গ্রুপ যাত্রার ৫০ বছর পূর্তি করল। দেশের সুউচ্চ ও দৃষ্টিনন্দন ভবনের শুরুটা কনকর্ডের হাত ধরে। শুরুটা কীভাবে হয়েছিল।  

শাহরিয়ার কামাল: ১৯৭৩ সালে মাত্র চারজন কর্মী নিয়ে আমাদের চেয়ারম্যান এস এম কামালউদ্দিন কনকর্ডের যাত্রা শুরু করেন। তাঁর প্রধান মূলধন ছিল বুদ্ধি ও আত্মবিশ্বাস। দেশের মানুষের জন্য কিছু করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তিনি চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় আসেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সেতু পুনর্নির্মাণের কাজ দিয়ে কনকর্ডের প্রথম পথচলা শুরু হয়। এরপর জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আইডিবি ভবন, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম, কনকর্ড পুলিশ প্লাজাসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণ করেছি আমরা। এমনকি সিঙ্গাপুরে সিঙ্গটেল টাওয়ারও কনকর্ড নির্মাণ করেছে। গত ৫০ বছরে আবাসন ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে ১ হাজার ২০০টির বেশি প্রকল্প সম্পন্ন করেছে কনকর্ড।

বর্তমানে কনকর্ড দেশের আবাসন খাতের একটি আস্থার ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। গত ৫০ বছরে অনেক কোম্পানি এসেছে এবং হারিয়ে গেছে; কিন্তু কনকর্ড সব সময় টেকসই প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে, বড় ধরনের উত্থান-পতন দেখেনি। হঠাৎ বড় হওয়া আমাদের লক্ষ্য নয়। আমাদের চেয়ারম্যান শুরু থেকেই সততা, নিষ্ঠা ও সুশাসনের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি শিখিয়েছেন যে মানুষের আস্থা অর্জন করতে অনেক সময় লাগে; কিন্তু তা হারাতে পাঁচ মিনিটও লাগে না। তাই যেকোনো প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে আমরা অনেক কিছু চিন্তা করি, যার কারণে গ্রাহকের কাছ থেকে খুব বেশি অভিযোগ আসে না।

বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ বিশ্বাসযোগ্য আবাসন নির্মাতা খুঁজছে, যেখানে তাদের বিনিয়োগ নিরাপদ থাকবে। আমরা মনে করি, এ অবস্থা আমাদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে।
শাহরিয়ার কামাল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কনকর্ড গ্রুপ
প্রথম আলো:

গত ৫০ বছরে কনকর্ড গ্রুপ কতটা বড় হলো। আর কী কী খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে। 

শাহরিয়ার কামাল: যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে যেকোনো ব্যবসা থেমে যাবে। আমরা ভবন নির্মাণ দিয়ে শুরু করে পরে বহুতল ভবন তৈরি করি। এরপর বিমানবন্দর, ইনডোর স্টেডিয়ামের মতো বড় প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করি। তখনই আমরা উপলব্ধি করি যে জমির ওপর ভবন নির্মাণ একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। ফলে বাংলামোটর ও গুলশানে আমরা প্রথম অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং তৈরি করি। এরপর ১৯৭৮-৭৯ সালের দিকে গুলশানে প্রথম বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করি, যখন সবাই বলেছিল মতিঝিল ছেড়ে গুলশানে কেউ অফিস খুলবে না।

আমাদের চেয়ারম্যানের নির্দেশনা ছিল, ব্যবসা যেন নির্দিষ্ট কোনো খাতে সীমাবদ্ধ না থাকে। তাই আমরা বিলাসবহুল প্রকল্পের পাশাপাশি স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য লেক সিটির মতো প্রকল্পও করেছি। একই সঙ্গে আমরা টেকসই নির্মাণের দিকেও মনোযোগ দিয়েছি। পোড়ামাটির ইটের কারণে প্রতিবছর ১ শতাংশ কৃষি জমি হারাচ্ছি। এটা জেনে ২০০০ সাল থেকে আমরা পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদন করে আমাদের সব প্রকল্পে ব্যবহার করা শুরু করি। এখন সরকারও সব প্রকল্পে এই ইট ব্যবহার করছে। এরপর আমরা সুস্থ বিনোদনের কথা ভেবে থিম পার্ক তৈরি করি। বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আমাদের আটটি পার্ক, গো-কার ও হোটেল রয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতে আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছি। তবে আমাদের ব্যবসার প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ এখনো আবাসন খাতকেন্দ্রিক।

প্রথম আলো:

একটি প্রতিষ্ঠান বড় হওয়ার পেছনে কর্মীদের অবদান থাকে। আপনারা কর্মীদের কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

শাহরিয়ার কামাল: আমার বাবা চারজন কর্মী নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন; আর এখন আমাদের সঙ্গে প্রায় দুই হাজার কর্মী যুক্ত আছেন। বাবার একটি স্বপ্ন ছিল, যা একা বাস্তবায়ন করা সম্ভব ছিল না। এর জন্য নিবেদিত কর্মী প্রয়োজন এবং আমরা তাঁদের পেয়েছি। চেয়ারম্যানের লক্ষ্য ও নির্দেশনার পর আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো কর্মীবাহিনী। আমাদের যেকোনো সংকটে কর্মীরা পাশে ছিলেন। আজকের কনকর্ড গ্রুপের এই পর্যায়ে আসার পেছনে কর্মীদের সমান অংশীদারত্ব রয়েছে। এ কারণে আমরা কর্মীদের সব ধরনের সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করি। ৫০ বছর পূর্তিতে নতুন কিছু সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। এখন থেকে কর্মীদের সন্তানদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হবে। এ ছাড়া কর্মরত অবস্থায় কোনো কর্মী মারা গেলে ছয় মাস পর্যন্ত পরিবারকে বেতনের সমপরিমাণ সুবিধা দেওয়া হবে এবং বিশেষ বোনাসও দেওয়া হচ্ছে।

প্রথম আলো:

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আবাসন ব্যবসা কেমন চলছে। আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

শাহরিয়ার কামাল: বর্তমানে আবাসন ব্যবসার গতি বেশ কমে গেছে। আবাসন ব্যবসা মূলত পুরো অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। আমেরিকায় যেমন আবাসন খাত ভালো করলে অর্থনীতিও ভালো করে, তেমনি আমাদের এখানেও এর প্রভাব দেখা যায়। আবাসন ঋণের সুদহার ১৪-১৫ শতাংশে উঠেছে এবং জমির দাম অনেক বেড়ে গেছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে আবাসন খাতে কিছুটা ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। যার ফলে নতুন প্রকল্প গ্রহণ অনেক কমে গেছে। সিমেন্ট ও রডের বিক্রি কমে যাওয়াও আবাসন খাতের এই পরিস্থিতি নির্দেশ করে। তারপরও চলতি বছর আমরা ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১০টি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এই পরিস্থিতিতে মানুষ বিশ্বাসযোগ্য আবাসন নির্মাতা খুঁজছে, যেখানে তাদের বিনিয়োগ নিরাপদ থাকবে। আমরা মনে করি, এ অবস্থা আমাদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে।