প্রবাসী আয় বাড়াতে ডলারের দামের পার্থক্য কমাতে হবে

আনিস এ খান

দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় আসা কমে যাওয়ার বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে সমস্যা হবে। আমদানি-রপ্তানির যে পার্থক্য বর্তমানে রয়েছে, তা আরও বেড়ে যেতে পারে।

বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত ব্যাংকের সংগঠন বাফেদা ও ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ডলারের যে দাম নির্ধারণ করে, তার সঙ্গে বাজারে এই মুদ্রাটির বিনিময় হারের সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই। তার মানে হচ্ছে, প্রকৃত বিনিময় হারের তুলনায় সরকার নির্ধারিত বিনিময় হার অনেক কম। 

প্রবাসী বাংলাদেশিরা যাঁরা রেমিট্যান্স পাঠান, তাঁদের বেশির ভাগই শ্রমিক পর্যায়ের, নিম্নবিত্ত মানুষ। তাঁরা কঠোর পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করেন। এই প্রবাসীরা মাসে ২০০-৪০০ ডলার দেশে থাকা পরিবারের কাছে পাঠান। ফলে তাঁরা যেখানে ডলারপ্রতি দুই টাকা বেশি পাবেন, সেখানেই যাবেন।

ব্যাংকগুলো বিদেশে প্রবাসীদের কাছে সেভাবে পৌঁছাতে পারে না। তার বিপরীতে হুন্ডিওয়ালারা শ্রমিকদের বিভিন্ন ক্যাম্পে চলে যায়। ফলে হুন্ডিওয়ালাদের মাধ্যমে শ্রমিকেরা টাকা পাঠাতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।

আনুষ্ঠানিক মাধ্যমে প্রবাসী আয় বাড়াতে হলে বাজারদর অনুযায়ী ডলারের বিনিময় হার ঠিক করতে হবে। বর্তমানে নির্ধারিত বাজারদরের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। খোলাবাজারের চেয়ে নির্ধারিত হারের পার্থক্য অনেক বেশি। এই অবস্থা যত দিন চলবে, তত দিন আনুষ্ঠানিক মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা বাড়বে না।

ব্যবসায়ীরা শুধু আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের সংকটের কথা বলে থাকেন। অথচ বাংলাদেশে কাজ করা বিদেশিরা তাঁদের বেতনের অর্থ বিদেশে পাঠান। আবার শিপিং, এয়ারলাইনস, হজযাত্রা, বিদেশে পড়াশোনাসহ বিভিন্ন খাতে ডলার খরচ হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি ঋণের অর্থ শোধ করতেও বড় অঙ্কের অর্থ খরচ হচ্ছে।

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ডলারের দাম বাজারভিত্তিক বা ভাসমান করে দেওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফও তাদের বিভিন্ন বার্তায় এটা করতে বলেছে। ডলারের দাম ভাসমান করা হলে প্রাথমিকভাবে হয়তো ডলারের দাম বাড়বে। হয়তো ১২০-১৩০ টাকায় চলে যাবে। তবে একপর্যায়ে তা বাজারভিত্তিক হয়ে ঠিক হয়ে যাবে।

প্রসঙ্গত, বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম উৎস প্রবাসী আয় দেশে আসার পরিমাণ গত আগস্টে কমে গেছে। গত মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। গত বছরের আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছিল ২০৪ কোটি ডলার।

  • আনিস এ খান, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক