সাক্ষাৎকার: বিজিএমইএর নির্বাচন

জবাবদিহি থাকবে সদস্যদের কাছে

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পর্ষদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। নির্বাচনে তিনটি জোট থাকলেও ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। পোশাকশিল্পের চ্যালেঞ্জ, বিজিএমইএতে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ফোরামের দলনেতা মাহমুদ হাসান খান । সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভংকর কর্মকার। 

প্রথম আলো:

ভোটারদের আপনারা কী ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন?

মাহমুদ হাসান খান: প্রতিশ্রুতির সঙ্গে ভোটাররা কেন ভোট দেবেন, সেটাকে সরাসরি মেলানো যাবে না। প্রথম কথা হচ্ছে, তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা বিজিএমইএতে একটা পরিবর্তন চান। আর তাঁদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়াটা আমরা নিশ্চিত করেছি। ভোটাধিকার জাতীয় পর্যায়ের পাশাপাশি এখানেও (বিজিএমইএ) ছিল না। আমাদের প্রথম প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, আমরা একটা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক বিজিএমইএ উপহার দেব। আপনি পাল্টা প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে আগে যাঁরা পর্ষদে ছিলেন, তাঁদের কি জবাবদিহি ছিল না? আমি বলব, ছিল না। সদস্যদের চেয়ে সরকারি দলের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তাঁদের জবাবদিহি বেশি ছিল। তার কারণ, নেতৃত্ব ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হতো। আমরা চাই, সত্যি সত্যি আমাদের জবাবদিহি থাকবে সদস্যদের কাছে। সে জন্য আমরা ভোটে এসছি। আমরা মনে করি, নেতৃত্ব আসবে তৃণমূল থেকে বা সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে। দ্বিতীয়ত, বিজিএমইএর টাকায় ইনস্টিটিউট হয়েছিল। পরে ইনস্টিটিউটটি বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত হয়। কথা ছিল, যাঁরা ট্রাস্টি থাকবেন, তাঁদের পরিবর্তন করা হবে। পরে দেখা গেল, ট্রাস্টিরা স্থায়ী হয়ে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি অনেকের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হওয়ার বিষয়টি সাধারণ সদস্যরা পছন্দ করছেন না। আমরা দায়িত্বে এলে ট্রাস্টি বোর্ডে পর্ষদ সদস্য, সাবেক সভাপতি ও যোগ্য সাধারণ সদস্যদের নিয়ে আসব। তৃতীয়ত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের নিয়ে আমরা সত্যি কাজ করতে চাই। প্রতিযোগিতা ধরে রাখার পাশাপাশি তাঁদের বড় করতে স্বল্প সুদে তহবিল দিতে হবে। তাঁদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেটি পয়সা দিয়ে কিনতে পাওয়া যাবে না। সে জন্য আমরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তায় যা যা করণীয়, করব। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, কাস্টমসের ডিজিটালাইজেশন, ব্যবসা থেকে প্রস্থান নীতি বা এক্সিট পলিসি নিয়েও আমরা কাজ করব।

প্রথম আলো:

ভোটার তালিকা নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করায় সম্মিলিত পরিষদের নেতারা কিছুটা ক্ষুব্ধ। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?

মাহমুদ হাসান খান: ভোটার তালিকা প্রণয়নে এবার কঠিন কোনো নিয়মকানুন চালু করা হয়নি। বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা আগেও ছিল, এখনো আছে। তবে আগে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভোটারসংখ্যা বাড়ানোর জন্য সেই বিধিমালার আংশিক মানা হয়েছে; আংশিক মানা হয়নি। এতে করে বছরের পর বছর ধরে যেসব কারখানার অস্তিত্ব নেই, সেসবের নামে ভোটার হয়েছেন অনেকে। পরে তাঁরা বিজিএমইএর নেতৃত্বে কারা আসবেন, সেটি নির্ধারণে প্রভাব ফেলেছেন। এখান থেকে বের হওয়ার জন্য আমরা দুই জোট (ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ) একটা ঐকমত্যে আসি যে যেসব কারখানার অস্তিত্ব নেই, তারা যেন ভোটার না হতে পারে।

প্রথম আলো:

সাধারণ মালিকদের অনেকে অভিযোগ করেন যে বিজিএমইএ কার্যালয়ে তাঁরা প্রাপ্য সম্মান ও যথাযথ সেবা পান না। এমনকি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ অনিয়মের সঙ্গেও জড়িত হয়ে গেছেন। আপনারা পর্ষদে আসতে পারলে এসব বিষয়ে কী উদ্যোগ নেবেন?

মাহমুদ হাসান খান: সদস্যদের প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই আমরা ভোটে এসেছি। আমরা দায়িত্বে এলে সদস্যদের জন্য বিজিএমইএ ভবনের প্রবেশ ফটকে আলাদা ডেস্ক থাকবে। ওয়ান–স্টপ সার্ভিস পাবেন সদস্যরা। সদস্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জন্য থাকবে আলাদা ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে আমরা এমন পরিষেবা চালু করব যাতে সদস্যরা অনুভব করেন যে তিনি নিজের বাড়িতে এসেছেন। সদস্যরা অতীতে প্রাপ্য সম্মান না পাওয়ার কারণ, তাঁর ভোট কিংবা মতামতের প্রয়োজন হয় নাই। আমরা সেটি ফিরিয়ে আনব।

প্রথম আলো:

যেসব কর্মকর্তা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত...

মাহমুদ হাসান খান: এখানে আমাদের বার্তা হচ্ছে, আমরা নিজেরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হব না, কাউকে দুর্নীতি করতে দেব না।

প্রথম আলো:

বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদ বেশ বড়, ৩৫ জনের। তবে নির্বাচনের পর দেখা যায়, ৫ থেকে ১০ জন ছাড়া বাকিদের খুঁজে পাওয়া যায় না। আপনারা নির্বাচনে জয়ী হলে ব্যতিক্রম কিছু দেখা যাবে কি?

মাহমুদ হাসান খান: ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আমরা গুরুত্বসহকারে আলোচনা করেছি। আমরা পরিকল্পনা করেছি, একেকজন নির্বাচিত পরিচালকের অধীনে ৫০-৭০টি কারখানা থাকবে। সেসব কারখানার ভালো–মন্দ সেই পরিচালক দেখভাল করবেন। ফলে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। কেউ যদি ব্যস্ততার কারণে ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তাহলে আমরা তাঁকে বলব, দুঃখিত, আপনি ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত; আপনি পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করুন। তাঁর পরিবর্তে নিয়ম মেনে পরবর্তী যোগ্য প্রার্থীকে আমরা বেছে নেব। ফলে আমরা যদি সদস্যদের সমর্থন পাই, তাহলে আমরা একটি কার্যকর পর্ষদ গঠন করব।

প্রথম আলো:

অতীতে দেখা গেছে যে বিজিএমইএ কার্যালয়কে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করেছেন দুই-একজন নেতা। যেহেতু আপনি একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত, সেহেতু আপনি জয়ী হলে এমন কিছু কি ঘটবে?

মাহমুদ হাসান খান: প্রশ্নই আসে না। আমি একটা নির্দিষ্ট জেলায় রাজনীতি করি। আমি আমার ব্যবসায়িক কার্যালয়েও কোনো রাজনৈতিক বৈঠক করি না। বিজিএমইএর কার্যালয় তৈরি পোশাকশিল্পের মালিক ও তাঁদের প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জায়গা। ফলে কোনো অবস্থায়ই সেখানে রাজনীতি ঢুকতে দেব না আমি।