চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। দেশের আমদানি, রপ্তানি, বাণিজ্য, রাজস্ব আয় এবং শিল্পোন্নয়নের প্রবাহ এই বন্দরকে ঘিরেই পরিচালিত হয়। তাই এই বন্দরের সুষ্ঠু ও ভারসাম্যপূর্ণ কার্যক্রমই জাতীয় অর্থনীতির স্থিতিশীলতার মূল ভিত্তি। বর্তমান বৈশ্বিক পটভূমিতে যখন অর্থনৈতিক মন্দা, ডলার–সংকট, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও পরিবহন ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতি ব্যবসায়ীদের নাজুক অবস্থায় ফেলেছে, তখন চট্টগ্রাম বন্দরে ট্যারিফ বৃদ্ধি বা নতুন মাশুল আরোপের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে ব্যবসায়ী সমাজের জন্য এক বড় ধাক্কা। বন্দরের এ সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতো পরিস্থিতি।
আমরা সব সময় চেয়েছি বন্দরের উন্নতি হোক, দেশ এগিয়ে যাক। কিন্তু উন্নয়নের নামে যখন ব্যবসায়ী ও পণ্য পরিবহন খাতের প্রতিনিধি সংগঠনগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে একতরফাভাবে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন তা গণতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার পরিপন্থী। বন্দর ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ, বিশেষ করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ট্রাকমালিক, রপ্তানিকারক ও চেম্বার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে যুক্তিসংগত মাশুল নির্ধারণ করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সেটি করা হয়নি।
বর্তমানে একটি ২০ ফুট কনটেইনার আনলোড করতে গড়ে ৬ হাজার টাকার বেশি খরচ হচ্ছে আর রপ্তানির ক্ষেত্রে ৩ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হচ্ছে। পারমিশন ফি, আনলোডিং চার্জ ও আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করলে একেকটি কনটেইনারের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, তেমনি দেশের রপ্তানি পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা হারাচ্ছে। এই চাপের ফলে পণ্যের মূল্যও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, যা সাধারণ মানুষের ওপরও প্রভাব ফেলছে।
চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বহু বছর ধরে বন্দরের উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও সেবার মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বন্দরের আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইজেশনের পেছনে আমাদের সদস্যদের ভূমিকা অপরিসীম।
আমরা বিশ্বাস করি, এখনই সময় সরকারের পক্ষ থেকে একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, মাশুল বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে স্থগিত করা হোক।
এস এম সাইফুল আলম, সভাপতি, চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন