শেয়ারবাজারে আস্থা ফেরাতে স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে 

আগামী ২ জুন ঘোষিত হতে যাচ্ছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের এটিই প্রথম বাজেট। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে বাজেটকে ঘিরে তাই বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশাও বেশি। তাঁরা চান ব্যবসা-বাণিজ্যের পথে যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলো দূর করার দিকনির্দেশনা থাকবে বাজেটে। বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের বাজেট প্রত্যাশা নিয়েই এবারের মূল আয়োজন।

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার সংস্কারে যেসব উদ্যোগ নেওয়া আছে, সেগুলো দীর্ঘ মেয়াদে একটা টেকসই ও শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে শেয়ারবাজারের এখন যে পরিস্থিতি, তাতে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে স্বল্পমেয়াদি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কারণ, এই মুহূর্তে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা সবচেয়ে কম। প্রতিদিনই বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন অনেক বিনিয়োগকারী। এ কারণে বাজেটে এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে বিনিয়োগকারীদের বাজার ছেড়ে যাওয়া থামে। পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে আসতে উৎসাহিত হন। শুধু কথা দিয়ে বিনিয়োগকারীদের বাজারে ধরে রাখা যাবে না। এ জন্য বাজেটে প্রণোদনা থাকতে হবে। বাজেটে সে ধরনের কোনো ব্যবস্থা না থাকলে বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি বাজারবিমুখ হবেন। তখন বাজারে ফ্রি ফল বা বড় ধরনের পতন শুরু হতে পারে। 

শেয়ারবাজারে ভালো বিনিয়োগকারী আনতে হলে ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে হবে। বিদ্যমান কর কাঠামো দিয়ে সেটি সম্ভব হবে না। তাই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির মধ্যেকার করপোরেট কর হারের ব্যবধান বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছি আমরা। আশা করছি বাজেটে তার প্রতিফলন থাকবে। সেটি হলে ভালো কোম্পানি বাজারে আসতে উৎসাহিত হবে। পাশাপাশি বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের বাজারে ধরে রাখতে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর লেনদেন কর কমানোর পাশাপাশি সব ধরনের বিনিয়োগকারীর মূলধনি মুনাফাকে করমুক্ত করতে হবে। বর্তমানে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর লেনদেনের ওপর থেকে লাখে ৫০ টাকা অগ্রিম আয়কর বা এআইটি কাটা হয়। সেটি কমিয়ে লাখে ১৫ টাকায় নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছি আমরা। তাতে বিনিয়োগকারীদের লেনদেন মাশুলও কমবে। বর্তমানে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত মূলধনি মুনাফা করমুক্ত। ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফায় কর রয়েছে। আগামী বাজেটে সেটি তুলে নেওয়া হলে তাতে বড় ও সম্পদশালী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন।

এ ছাড়া এক লাখ পর্যন্ত লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত করার পাশাপাশি এক লাখ-পরবর্তী লভ্যাংশ আয়ের ওপর আরোপিত করকে চূড়ান্ত দায় হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।

সরকারের সামনে রাজস্ব আয় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, সেটি আমরা জানি। তাই আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের কিছু জায়গায় কর ছাড় দিয়ে বা কর হারকে নমনীয় রেখে রাজস্ব আহরণের বিকল্প উৎসগুলোকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়ার। বহুজাতিক কোম্পানি ও সরকারি লাভজনক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে সরকার বিপুল অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকার শেয়ারবাজারের জন্য যেটুকু কর ছাড় দেবে, তার চেয়ে বেশি অর্থ এসব কোম্পানির মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারবে। এ ছাড়া সরকারি অনেক আয়বর্ধক কোম্পানি আছে, যেগুলো সরকারের কাছ থেকে প্রতিবছর বড় অঙ্কের অর্থ ধার করে। সেটি না করে কোম্পানিগুলো বন্ড ছেড়ে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে।

বর্তমানে সরকারি ট্রেজারি বিল বন্ডে অনেক বেশি সুদ। এ কারণে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আগামী বাজেটে সরকারি ট্রেজারি বিল বন্ডের প্রাইমারি নিলাম শেয়ারবাজারের ওপর ন্যস্ত করতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক এই কাজ করছে। এসব নিলামে কিছুসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তার বদলে শেয়ারবাজারের মাধ্যমে এই নিলাম আয়োজন করা হলে তাতে অধিক সংখ্যক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। তাতে সুদহারও অনেক বেশি বাজারভিত্তিক হবে। সব মিলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের ভাগ্য অনেকাংশে নির্ভর করছে আগামী বাজেটের ওপর।