অনলাইন কাজে হিস্যা কমেছে

শোভন কাজের অভাবে দেশে ঘরে থেকে কাজের আগ্রহ বাড়ছে। নারীরা নানা কারণে ঘরে থেকে কাজে আগ্রহী হচ্ছেন।

বৈশ্বিক বাজারে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজের চাহিদা আসে মূলত উন্নত দেশগুলো থেকে। তবে সরবরাহ আসে ঠিক ভিন্ন আরেক অঞ্চল থেকে—উন্নয়নশীল দেশ। উন্নত দেশেও অনেকে ফ্রিল্যান্সিং করে থাকেন। তবে তাঁদের ক্ষেত্রে কাজের প্রণোদনা ভিন্ন। অন্যদিকে এই জগতে বাংলাদেশের হিস্যা কমেছে।

ব্যাপারটা হলো, উন্নত দেশের মানুষেরা যেখানে উপার্জন বৃদ্ধির জন্য এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হন, সেখানে উন্নয়নশীল দেশের মানুষেরা মূলত শোভন কাজের অভাবে এই জগতে যুক্ত হন। এ ছাড়া নারীদের ক্ষেত্রে ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করা এখনো কঠিন বলে অনেকে ফিল্যান্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ‘ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক বা বৈশ্বিক কর্মসংস্থান ও সামাজিক পূর্বাভাস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

অনলাইনে কাজের প্রণোদনা হিসেবে কোন ব্যাপারগুলো কাজ করে, এ প্রশ্নের জবাবে নারীরা মূলত উপার্জন বৃদ্ধি এবং কাজের ধরাবাঁধা পালা না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তবে উন্নয়নশীল দেশে যেখানে সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা দুর্বল, সেখানে মূলত দ্বিতীয় কারণটিই বেশি প্রযোজ্য। বিশেষ করে মাতৃত্ব নাকি কাজ—এই দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে উন্নয়নশীল দেশের নারীরা ঘরে থেকে কাজের সুযোগ বেছে নিচ্ছেন। পরিচয় প্রকাশ না করে এক নারী আইএলওকে বলেছেন, ‘নারী হিসেবে আমি ঘর থেকে কাজ করাই শ্রেয় বোধ করি। এতে যেমন আমি অন্যদের চেয়ে বেশি উপার্জন করি, তেমনি সন্তান ও পরিবারকেও সময় দিতে পারি—এটাই মূল কারণ।’

এ ছাড়া বাংলাদেশে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বৃদ্ধি এবং সামগ্রিকভাবে পারিবারিক অবস্থার উন্নতির কারণেও নারীদের ঘর থেকে কাজের আগ্রহ বাড়ছে বলে সম্প্রতি আইএলওর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে অনেক বেশি মানুষ কাজ করেন। শোভন কাজের অভাবও বেশ প্রকট। এমনকি অর্থনৈতিকভাবে শোভন চাকরিতে সন্তুষ্টির মাত্রা কম। এই পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই সেই ঝামেলায় যেতে চান না। বরং বাড়িতে বসে কাজ করাই শ্রেয় মনে করেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশি এক নাগরিক বলেছেন, ‘অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে আমার জন্ম। এখানে ভালো চাকরি খুঁজে পাওয়া কঠিন। সুবিধা হলো, ফ্রিল্যান্সিংয়ের উপার্জন অন্য চাকরির চেয়ে বেশি। আর এখানে আমি নিজেই আমার বস—কেউ আমার ওপর খবরদারি করতে পারে না। এই স্বাধীনতা আমি উপভোগ করি।’

সরবরাহকারী উন্নয়নশীল দেশ

বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপাইনের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো এই ফ্রিল্যান্সিংয়ের চাহিদা মেটানোয় এগিয়ে আছে। ভারত এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি। ২০২০ সালে অনলাইন কর্মী সরবরাহে ভারতের হিস্যা ছিল ৩৪ শতাংশ, ২০১৮ সালের তুলনায় বেড়েছে ৮ শতাংশ। তবে এ সময়ে বাংলাদেশের হিস্যা উল্টো কমেছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল যেখানে ১৯ শতাংশ, সেখানে ২০২০ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২ শতাংশ। বোঝা যাচ্ছে, মহামারির ধাক্কা দেশের ফ্রিল্যান্সাররা পুরোপুরি সামলাতে পারেননি। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে, ২০১৮ সালে বিক্রয় ও বিপণনে বাংলাদেশের বড় একটি কর্মী বাহিনী (দেশের মোট হিস্যার প্রায় ৭ শতাংশ) কাজ করলেও ২০২০ সালে তা অনেকটাই কমে এসেছে (২ শতাংশের মতো)। তবে সৃজনশীল ও মাল্টিমিডিয়ার জগতে হিস্যা বেড়েছে।

অনলাইনেও বৈষম্য

ওয়েবভিত্তিক কাজের ক্ষেত্রে ঘণ্টাপ্রতি মজুরি সাধারণত ৩ দশমিক ৪ ডলার। তবে এই প্ল্যাটফর্মের অর্ধেক কর্মী ঘণ্টায় ২ দশমিক ১ ডলার আয় করে থাকেন। ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মে ঘণ্টাপ্রতি গড় আয় ৭ দশমিক ৬ ডলার। মাইক্রোটাস্ক প্ল্যাটফর্মে এই আয় ৩ দশমিক ৩ ডলার। তবে ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মে উন্নয়নশীল দেশের কর্মীরা উন্নত দেশের কর্মীদের চেয়ে অন্তত ৬০ শতাংশ কম আয় করেন। নারী-পুরুষের ক্ষেত্রেও মজুরি ব্যবধান দেখা যায়। তবে সেই চিত্র কিছুটা মিশ্র।

এ ছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সি ও সরবরাহের মজুরি প্রথাগত কাজের চেয়ে বেশি। নানা ধরনের প্রণোদনা ও ভাতার কারণে বেকারদের মধ্যে অনেকেই এ কাজে উৎসাহিত হচ্ছে। গ্রাহকেরাও কম টাকায় গাড়ি ভাড়া করতে পেরে উপকৃত হচ্ছেন।