অর্থনীতিবিদের স্ত্রী বলে কথা

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ রবার্ট এমারসন লুকাস জুনিয়র
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ রবার্ট এমারসন লুকাস জুনিয়র

রবার্ট এমারসন লুকাস জুনিয়র এ সময়ের অন্যতম সেরা অর্থনীতিবিদ। সবচেয়ে প্রভাবশালী সামষ্টিক অর্থনীতিবিদ হিসেবে মনে করা হয় তাঁকে। রবার্ট লুকাস ১৯৯৫ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পান। যৌক্তিক প্রত্যাশার তত্ত্ব দিয়ে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। নোবেল কমিটি প্রশংসাবচনে বলেছিল, রবার্ট লুকাস মানুষের যৌক্তিক প্রত্যাশার তত্ত্ব উদ্ভাবন ও প্রয়োগের মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনীতির বিশ্লেষণী কাঠামোকে বদলে দিয়েছেন এবং অর্থনৈতিক নীতিমালা সম্পর্কে উপলব্ধিকে গভীরতর করেছেন।

রবার্ট লুকাসের জন্ম হয় ১৯৩৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর, ওয়াশিংটনে। তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে ইতিহাসে স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৯৬৪ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি কার্নেগি ইনস্টিটিউটে অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন, ১৯৬৭ সালে সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৭০ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৭৫ সালে তিনি অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে।

গল্পটা আসলে রিটা কোহেন লুকাসের। ঘটনাটা তাহলে খুলেই বলা যাক। নোবেল পুরস্কারের মূল্যমান ১০ লাখ ডলার। নোবেল পাওয়ার সময় রবার্ট লুকাসের বয়স ছিল ৫৮ বছর। নিঃসন্দেহে নোবেল পুরস্কারের ঘোষণায় খুশি হয়েছিলেন তিনি। সম্ভবত তার চেয়েও বেশি খুশি হয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী রিটা লুকাস। যদিও তখন রিটা রবার্ট লুকাসের সাবেক স্ত্রী। রিটার সঙ্গে রবার্টের ছাড়াছাড়ি হয়েছিল সাত বছর আগে। তাহলে রিটার খুশির কারণ কী?

কারণটাই আসল গল্প। আনুষ্ঠানিক ছাড়াছাড়ির সময় রিটা সম্পত্তি ভাগাভাগির চুক্তিতে ছোট্ট একটা লাইন লিখে দিয়েছিলেন। আর সেটাই এখন ইতিহাস হয়ে আছে। তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয় ১৯৮৯ সালে। চুক্তিপত্রে রিটা লিখে দিয়েছিলেন, রবার্ট লুকাস যদি সাত বছরের মধ্যে নোবেল পুরস্কার পান, তাহলে তার ৫০ শতাংশ রিটা লুকাসকে দিয়ে দিতে হবে।

রবার্ট লুকাস নোবেল পেয়েছিলেন ঠিক সাত বছরের মাথায়, ১৯৯৫ সালের ১০ অক্টোবর। আর চুক্তির মেয়াদ ছিল ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। অর্থাৎ আর ২১ দিন পর নোবেল পেলেই কিন্তু পুরো অর্থ হয়ে যেত রবার্ট লুকাসের।

নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পরপরই সাংবাদিকেরা ছুটে গিয়েছিলেন দুজনের কাছেই। শিকাগো ট্রিবিউন লিখেছে, রবার্ট লুকাস একটি কথাই বলেছিলেন, ‘ডিল ইজ ডিল’। আরও বলেছিলেন, ‘এটা ছিল রিটার আইডিয়া। আমি যদি জানতাম যে আমি নোবেল পাব, তাহলে হয়তো ধারাটা বদলে দিতাম।’ আর রিটা? শিকাগো ট্রিবিউন লিখেছে, রিটা তখন হয়তো হিসাব কষছিলেন যে ব্যক্তিপর্যায়ে আয়করের হার ৩৯ দশমিক ৬ শতাংশ, আর রাজ্যের আয়কর আরও ৩ শতাংশ। তাহলে হাতে কত থাকল?

যৌক্তিক প্রত্যাশার তত্ত্ব দিয়েই নোবেল পেয়েছিলেন রবার্ট লুকাস। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ২৯ বছরের দাম্পত্য জীবনে রিটা লুকাস যৌক্তিক প্রত্যাশার সেই তত্ত্ব ভালোই শিখেছিলেন।