উন্নয়নশীল এশিয়া মন্দার কবলে

এডিবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সংকোচন হবে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ
ছবি: রয়টার্স

কোভিড-১৯-এর জেরে উন্নয়নশীল এশিয়ার ৪৫টি দেশে মন্দা শুরু হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সংকোচন হবে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। ফলে ছয় দশকের মধ্যে এই প্রথম উন্নয়নশীল এশিয়া এমন সংকোচনের মুখে পড়বে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে জানানো হয়েছে, চলতি বছরে এই অঞ্চলের তিন-চতুর্থাংশ দেশে অর্থনৈতিক সংকোচন হবে। তবে আগামী বছর এই অঞ্চলের অর্থনীতি দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ২০২২ সালে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

তবে এর আগে এডিবি বলেছিল, চলতি বছর উন্নয়নশীল এশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। এই প্রতিবেদনে সেই জায়গা থেকে সরে আসল তারা।

এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়াসুকি সোয়াদা বিবৃতিতে বলেছেন, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অধিকাংশ দেশের সামনে কঠিন সময়। এই প্রতিবেদনে এডিবি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাতারে চলে এসেছে। তারাও সম্প্রতি এ রকম পূর্বাভাস দিয়েছে।

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে আবার দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস করা হলেও এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ভারতের জিডিপি সংকোচন হয়েছে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এমনকি চলতি অর্থবছরেও ভারতের জিডিপি সংকোচনের পূর্বাভাস দিয়েছে একাধিক মূল্যায়ন প্রতিষ্ঠান। আর এডিবি বলছে, ভারতের সংকোচন হবে ৯ শতাংশ। এতে সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার সংকোচন হবে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

তবে চীন সবাইকে টেক্কা দিয়ে চলেছে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে সংকোচনের সম্মুখীন হলেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পর্যটননির্ভর দেশগুলোতে ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকোচন হচ্ছে। এডিবির পূর্বাভাস, চলতি বছর ফিজির সংকোচন হবে ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মালদ্বীপের সংকোচন হবে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারির ধাক্কায় এশিয়ার রপ্তানি কমেছে। তবে বৈশ্বিক পরিসরে রপ্তানির হার যতটা কমেছে, ততটা নয়। সামগ্রিক রপ্তানি কমলেও স্বাস্থ্যসেবা উপকরণের রপ্তানি বেড়েছে, বিশেষ করে পিপিইর। মহামারির মধ্যে ডিজিটাইজেশনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে। ফলে ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদকদের রপ্তানি আয় বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগস্ট মাস পর্যন্ত উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলোর সহায়তা প্যাকেজের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার, যা এই অঞ্চলের সামগ্রিক জিডিপির ১৫ শতাংশ।

এই প্রণোদনার মধ্যে যতটুকু নগদ সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে, তা প্রায় তারল্য ও পুঁজি সহায়তার সমান। মার্চ মাস থেকেই এশিয়ার বড় অর্থনীতিগুলো মুদ্রানীতি শিথিল করেছে। তা সত্ত্বেও অনেক দেশেই অর্থায়ন বেশ জটিল।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে পরিচালিত এডিবির এক জরিপে দেখা গেছে, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পকারখানার অর্ধেক চলতি পুঁজির ব্যাপক ঘাটতিতে আছে। আনুষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশের সুযোগও তাদের কম। তাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থায়িত্ব নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ২০২১ সালে চীনের প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ। আর আঞ্চলিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ইংরেজি এল আকৃতির হবে। ধারাবাহিক সংকোচনের পর কিছু সময়ের জন্য স্থবির হয়ে পড়া-এটাই এল আকৃতির মন্দা। তাই এই ধাঁচের মন্দার আশঙ্কা দেখা দিলে অর্থনীতিবিদেরা বরাবরই অস্বস্তিতে পড়ে যান।

এদিকে বিভিন্ন দেশ যেভাবে বাণিজ্য সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাতে প্রবৃদ্ধির গতি ব্যাহত হতে পারে বলে এডিবির আশঙ্কা।