এজেন্টদের কেন্দ্র করে উন্নয়ন ছড়িয়ে পড়বে

দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু হয়েছিল আরফান আলীর নেতৃত্বে। বর্তমানে তিনি ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

আরফান আলী

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: প্রথম কবে, কোথা থেকে এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু হয়েছিল। ব্যাংক থাকার পরও কেন তৃতীয় পক্ষ দিয়ে সেবা চালু হলো?

আরফান আলী: বিশ্বে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ব্রাজিলে। দেশটির আমাজন অঞ্চলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কাজ করাটা একটা দুঃসাধ্য ব্যাপার ছিল। তাই ১৯৯৯ সালে ব্রাজিল সরকার এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালুর অনুমোদন দেয়। এজেন্টদের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি ও আর্থিক সেবা গ্রহণ চালু করা হয়। তখন বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। এমনও হয়েছে, জাহাজ গিয়ে কোনো এলাকায় দু-তিন দিন অবস্থান করত। আর্থিক সেবাও জাহাজের সঙ্গে যেত। আবার ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিমানে করে গিয়ে জঙ্গল এলাকায় কয়েক দিন টাকা বিতরণ করে আবার বিমানে ফেরত আসতেন। ব্রাজিলে বিভিন্ন বিনোদনের টিকিট বিক্রির সঙ্গে ব্যাংকিং সেবাও দিতেন এজেন্টরা। পরবর্তী সময়ে একই মডেল অনুসরণ করে ফিলিপাইনও হাজার হাজার দ্বীপে এজেন্ট ব্যাংকিং ছড়িয়ে দেয়। এরপর মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। যেসব দেশে মানুষ বিচ্ছিন্ন জায়গায় বসবাস করেন, সেখানে এটা সফল হয়েছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শুরুটা কীভাবে হলো?

আরফান আলী: ২০১৩ সালে কয়েকটি ব্যাংক পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করে। তবে অন্যরা ভালো করতে পারেনি, আমরা ধরে রেখেছি। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা শুরু করি। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে চালু হয় প্রথম এজেন্ট। এরপর একের পর এক অন্য ব্যাংকগুলোও এজেন্ট চালু করেছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ব্যাংকের বাইরে তৃতীয় পক্ষ দিয়ে ব্যাংক সেবা। শুরুতে কেমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল?

আরফান আলী: নতুন ধরনের আর্থিক সেবা হওয়ায় শুরুতে গ্রাহকদের বিশ্বাসের অনেক ঘাটতি ছিল। আর্থিক সেবা ব্যাংকের বাইরে অন্য কেউ দেবে, এটা অনেকে ভাবতে পারেননি। বাংলাদেশ ব্যাংক শুরুতে বলেছিল, এজেন্টদের দায়ভার পুরোটা ব্যাংকের। শাখার সঙ্গে এজেন্টরা ট্যাগ করা ছিলেন। এর ফলে গ্রাহকদের আশ্বস্ত করতে কিছুটা সুবিধা হয়েছে। এ ছাড়া এজেন্টরা বাড়ির পাশে থাকাতেও গ্রাহকদের বিশ্বাস করাতে সুবিধা হয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা শুরুর দিককার একটা ঘটনা বেশ মনে পড়ে। একজন গ্রাহক সকালে ৫০০ টাকা জমা দিয়ে বিকেলে পুরোটা তুলে ফেললেন। তিনি বোঝার চেষ্টা করেছিলেন, টাকা জমা হলে ফেরত পাওয়া যায় কি না। শুরুর দিকে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। ওই সময়ে যুবক, ডেসটিনি ও ইউনিপের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নানা কাণ্ড ঘটায়। তাই অনেকে মনে করেছিলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংও একই ধাঁচের। এখন আর এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অবিশ্বাসের কিছু নেই।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সাত বছরে ব্যাংকের এক কোটি নতুন গ্রাহক। বড় সাফল্য নয় কি?

আরফান আলী: এই সময়ে এত গ্রাহক পাওয়াটা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের একটি বড় সাফল্য। এক কোটি নতুন গ্রাহকের মধ্যে ৮৩ শতাংশই গ্রামীণ এলাকার। আবার নতুন গ্রাহকদের মধ্যে ৪৮ শতাংশই নারী। কারণ, নারীর ক্ষমতায়নে এজেন্ট ব্যাংকিং ভালো ভূমিকা রাখছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: করোনাভাইরাসের মধ্যে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর কারণ কী?

আরফান আলী: করোনার শুরুতে অনেক এলাকায়ই ব্যাংকের শাখা বন্ধ ছিল। তবে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা পুরোদমে চলেছে। মূলত এ কারণেই বড় প্রবৃদ্ধি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ভবিষ্যতে এজেন্টরা আর কী কী সেবায় যুক্ত হতে পারেন?

আরফান আলী: এজেন্ট বুথগুলো হয়ে যাবে আর্থিক খাতের সুপার মার্কেটের বড় অংশ। ই-কমার্স, বিমা, সরকারের কর আহরণ, সরকারি ভাতা বিতরণ কার্যক্রমে এজেন্টদের ব্যবহার করা হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে বাজেট বাস্তবায়নের অংশ হবেন এজেন্টরা। এসএমই ও কৃষি ঋণ বিতরণ হবে তাদের মাধ্যমে। এজেন্টরা হবেন প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র। ভবিষ্যতে কিউ আর কোডের মাধ্যমে লেনদেনে বড় পরিবর্তন আসবে। এজেন্টদের কেন্দ্র করে উন্নয়ন ছড়িয়ে পড়বে।