‘এভাবে একটা নিয়ন্ত্রক সংস্থা চলে না’

বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন জাতীয় বিমা দিবস ও বিমা খাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফখরুল ইসলাম।

শেখ কবির হোসেন

প্রশ্ন :

দেশের বিমা খাত এত অবহেলিত ও পিছিয়ে কেন?

বিমা খাতের প্রতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দরদ ঠিকই ছিল। শুধু সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশন নয়, বিমা একাডেমিও করে গেছেন তিনি। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সরকারগুলো এ খাতের জন্য কিছুই করেনি। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা আসার আগপর্যন্ত ২১ বছরেই পিছিয়ে যায় মূলত বিমা খাত। বঙ্গবন্ধু নিজে যেহেতু বিমা কোম্পানিতে ছিলেন, এই কারণেই মনে হয় সরকারগুলো এতটি বছর বিমা খাতের সঙ্গে বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করেছে।

প্রশ্ন :

বিমা অধিদপ্তর বিলুপ্ত করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) যাত্রা শুরু করে ২০১১ সালে। তা–ও তো ১০ বছর কেটে গেল। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় বিমা খাতের অবদান তো মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ।

এ খাতের যে ভাবমূর্তির সংকট তৈরি হয়েছে আগে, তা কেটে যাচ্ছে। প্রতারণা কমছে। কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে আইডিআরএ। তবে এ খাতে দক্ষ জনবলের অভাব। সেটা আইডিআরএর ক্ষেত্রে যেমন সত্য, বিমা একাডেমির ক্ষেত্রেও সত্য। আর জিডিপিতে অবদান কম থাকার অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পুনর্বিমা ব্যবসায়ের অনেক প্রিমিয়াম বিদেশে চলে যাওয়া। এটা বন্ধ করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগী হতে হবে।

প্রশ্ন :

কী করবে অর্থ মন্ত্রণালয়?

যথা জায়গায় যথা লোক নিয়োগ দেবে। শুরুর দিকে আপনি অবহেলার কথা যে বলছিলেন, আইডিআরএর একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রেই তো মন্ত্রণালয়ের অবহেলা দেখি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা শক্ত না করা হলে বেসরকারি খাতে সুশাসনের ঘাটতি থাকবেই। তবে সীমিত সাধ্য নিয়েই আইডিআরএ কাজ করছে। এ খাতে একটা বিষফোড়া ছিল কমিশন প্রথা। এটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি। ভালোই হয়েছে। সংস্থাটিতে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা হতাশাগ্রস্ত। তাঁদের জীবনটা নষ্ট করা ঠিক হবে না। এভাবে একটা নিয়ন্ত্রক সংস্থা চলে না। তাঁদের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কিছু করা উচিত।

প্রশ্ন :

গাড়ির তৃতীয় পক্ষের (থার্ড পার্টি) বিমাও তো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে বিমা পলিসি করতেই চান না কেউ, সেখানে বাধ্যতামূলক একটা বিষয় বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হলো?

এখানে একটা ভুল–বোঝাবুঝি আছে। তৃতীয় পক্ষের বিমা বন্ধ হলেও কমপ্রিহেনসিভ বিমা কিন্তু বন্ধ নয়। নতুন গাড়ি কিনলে এটা করা দরকার। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিএ) এটাকে বাধ্যতামূলক করতে পারে। আর তৃতীয় পক্ষের বিমা থেকে তেমন ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় না। আইনে আছে শ্রমিকদের বিমা করতে হবে। কতটা কারখানা করে, সেটাও কঠোরভাবে দেখতে হবে। দরকার হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত যাবেন কারখানা কারখানায়—আমরা এটা চাই।

প্রশ্ন :

বিমা খাতের জন্য সামনে কী দেখতে পাচ্ছেন?

ভবিষ্যৎ ভালো। বড় প্রকল্পের বাস্তবায়ন হবে বিমা খাতের তহবিল দিয়ে। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে যখন কথা হচ্ছিল, তখনই আমরা বলেছিলাম এটা কোনো সমস্যা নয়। বিমা তহবিল দিয়েই তা করা যাবে। সরকারের উদ্দেশে এখনো বলছি, বড় প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য বিমা তহবিলকে কাজে লাগানো যায়।