‘এলডিসি থেকে বেরিয়ে আমরা এখন কোন দেশের তালিকায়, তা তো বুঝতে হবে’

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
প্রথম আলো ফাইল ছবি

‘স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বের হয়ে আমরা এখন কোন দেশের তালিকায় থাকব, তা তো পরিষ্কার বুঝতে হবে। বলা হচ্ছে, আমরা এলডিসি (লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি বা সংক্ষেপে এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশ (ডেভেলপিং কান্ট্রি) হতে যাচ্ছি। কথাটির মানে হয় না।’ গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের বিষয়ে এভাবেই মত প্রকাশ করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

ফেসবুকের ওই পোস্টে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘এটা সত্য এবং একটা গৌরবের বিষয়ও যে আমরা এলডিসির তালিকা থেকে বেরিয়ে আসব। কিন্তু আমরা সব সময়েই উন্নয়নশীল দেশ (ডেভেলপিং কান্ট্রি) ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকব, কারণ এলডিসি হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর (ডেভেলপিং কান্ট্রি) মধ্যেই কিছু দেশের গ্রুপ (উপ-গ্রুপ বা সা গ্রুপ), যারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) অধীনে কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট তিনটি সূচকের অনগ্রসরতা দিয়ে চিহ্নিত হয়; আমরা সেই সূচকের শর্তগুলো পূরণ করে উন্নয়নশীল দেশের সেই উপ-গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি, নতুন কিছু হতে যাচ্ছি না।’

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘ডব্লিউটিওর অধীনে উন্নত বনাম উন্নয়নশীল দেশের কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। তবে কোনো দেশ নিজেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দাবি করে কিছু সুযোগ চাইতে পারে, যদিও অন্য দেশগুলোর সেই দাবি মেনে নেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল না উন্নত দেশ, তা নিয়ে এই মুহূর্তে কেউ প্রশ্ন তুলবে না। কাজেই সেদিক থেকেও আমার একটি উন্নয়নশীল দেশ—এটা ঘোষণা দেওয়ার কোনো দরকার আছে বলে মনে হয় না। তবে এর আগে আমরা যে বিশ্বব্যাংকের সংজ্ঞা অনুযায়ী নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন–মধ্য আয়ের দেশের শ্রেণিভুক্ত হয়েছি, সেটা পরিষ্কার।’

আমাদের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ রপ্তানি প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা ধরে রাখা—এমনটা জানিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ হলো এলডিসি নয়, এমন অসংখ্য উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে, বিশেষত এ অঞ্চলের ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে আমরা রপ্তানি প্রতিযোগিতায় কীভাবে সক্ষমতা ধরে রাখব। এসব দেশ ইতিমধ্যে বিভিন্ন শুল্ক-সুবিধার গ্রুপের (যেমন আসিয়ান) সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে।’

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘এলডিসি হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে কোনো শুল্কছাড় দেয়নি; বরং বেশ কয়েক বছর আগে দেশটি উন্নয়নশীল অনেক দেশকে দেওয়া জিএসপি–সুবিধার তালিকা থেকেও বাংলাদেশকে বাদ দিয়েছে, যা আমাদের কূটনৈতিক চেষ্টা সত্ত্বেও ফিরে পাওয়া যায়নি। রপ্তানি বহুমুখী করতে এটা এখন একটা বড় বাধা হবে। আমাদের বিশেষভাবে দরকার ব্যক্তি খাতের রপ্তানিমুখী শিল্পে বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করার মতো পরিবেশ তৈরি করা। এ ধরনের বিনিয়োগে প্রযুক্তি হস্তান্তরের ফলে রপ্তানি বহুমুখী করা যেমন সম্ভব হয়, তেমনি রপ্তানি বাড়ার ফলে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের দায় ভবিষ্যতে সমস্যা তৈরি করে না। ভিয়েতনামের বড় সাফল্য এখানেই।’

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের নাম সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)। এর ফলে ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে পুরোপুরি বের হয়ে যাবে বাংলাদেশ।