ক্ষতি মেনেই ব্যবসায়ীদের এগিয়ে যেতে হবে

মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক সৈয়দ মুনিম আহমেদ
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সারা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের জন্য লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করে। তবে অভিযোগ উঠেছে, বড়রা প্রণোদনাসুবিধা পেলেও মাঝারি এবং ছোটরা পাচ্ছেন না। জেলা পর্যায়ে এ সংকট আরও প্রকট। এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক সৈয়দ মুনিম আহমেদ। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আকমল হোসেন

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: করোনাভাইরাসের কারণে দেওয়া লকডাউনে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছিল। লকডাউন তুলে নেওয়ার পর দোকানপাট খুলেছে। মৌলভীবাজারে এখন কী অবস্থা?

সৈয়দ মুনিম আহমেদ: সব ধরনের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। কিছু ব্যবসা এমনভাবে নষ্ট হয়েছে, যেগুলো ব্যবসায়ীদের পক্ষে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। এই সময়ে যাঁরা যাঁরা ব্যবসা চালিয়ে গেছেন, অধিকাংশই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন অর্ধেক দিয়েছেন। দোকানপাট চালু হলেও ব্যবসা এখনো আগের অবস্থায় যেতে পারেনি। মৌলভীবাজার একটি প্রবাসী-অধ্যুষিত এলাকা। প্রবাসীরা দেশে আসছেন না। প্রবাসীরা না আসার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য আগের অবস্থায় যায়নি। এ ছাড়া মৌলভীবাজার জেলা একটি পর্যটন এলাকাও। এখনো পর্যটকেরা আগের মতো আসছেন না। তবে আগে রিসোর্ট বা হোটেল-রেস্তোরাঁয় করপোরেট অতিথিরাই বড় দলে আসতেন। এখন করপোরেট খাতের লোকজন পারিবারিকভাবে দল বেঁধে আসছেন। এটা একটা ভালো দিক।

প্রশ্ন :

হোটেল-রেস্তোরাঁ, ছোট-বড় দোকানে অনেক কর্মী ছাঁটাই হয়েছেন। কর্মসংস্থান হারিয়ে অনেকেই দিশেহারা। তাঁদের নিয়ে আপনাদের কোনো ভাবনা আছে?

মুনিম আহমেদ: যাঁরা ছাঁটাই বা বাধ্যতামূলক ছুটিতে ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই কর্মস্থলে ফিরে আসছেন। যেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এখনো আসেননি, তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চেম্বারের সভাপতিসহ আমরা পরিচালকেরা সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি।

প্রশ্ন :

করোনাভাইরাসের কারণে যে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে ব্যবসায়ীদের, তা থেকে উত্তরণ কি সম্ভব? সম্ভব হলে কীভাবে?

মুনিম আহমেদ: এই সময়ে ব্যবসায়িক যে ক্ষতি হয়েছে, তা সবার পক্ষে কাটিয়ে ওঠা কঠিন। এই ক্ষতি মেনে নিয়েই ব্যবসায়ীদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা সেভাবেই তাঁদের উৎসাহিত করছি। অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা হয়নি, কিন্তু তারা কর্মীদের বেতন দিয়ে গেছে। এই ক্ষতি তাদের পক্ষে পোষানোর কোনো সুযোগ নেই।

প্রশ্ন :

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা কেমন পাচ্ছেন?

মুনিম আহমেদ: স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এখনো সরকারিভাবে তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি। প্রণোদনার কথা যেভাবে প্রচারিত হচ্ছে, মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা তা এখনো পাননি। প্রণোদনা বা ব্যাংকঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে শর্তসমূহ সহজ করা হলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণসুবিধা পেলে যে ক্ষতি হয়েছে, ব্যবসায়ীরা তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন।

প্রশ্ন :

মৌলভীবাজারে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা কী? সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো এবং প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠার উপায়গুলো কী?

মুনিম আহমেদ: মৌলভীবাজার জেলায় এখনো শিল্পকারখানার বিকাশ ঘটেনি। গ্যাস, বিদ্যুৎ-সংযোগসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অনুমতি বা ছাড়পত্র ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস’ বা এক জায়গা থেকে পাওয়ার কথা। কিন্তু এখানকার ব্যবসায়ীরা সে রকম কোনো সুযোগ-সুবিধা পান না বলে অনেক অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময় তাঁরা হয়রানির শিকার হন বলে জানান।

প্রশ্ন :

অনেকেই বলেন, মৌলভীবাজার একটি প্রবাসী-অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় ব্যাংকে অনেক টাকা অলস পড়ে আছে। শিল্পে তা বিনিয়োগ হচ্ছে না। এই টাকা বিনিয়োগে বাধাটা কোথায়?

মুনিম আহমেদ: আমরা জানি, ব্যাংকে অলস টাকা প্রচুর। কিন্তু স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চাইলে ব্যাংক থেকে টাকা পান না। অনেক প্রবাসী আছেন, যাঁরা নিজের জন্মভূমিতে একটা কিছু করার ইচ্ছা পোষণ করেন। কিন্তু চাইলেই তাঁরা কিছু করতে পারেন না। শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়তে গিয়ে প্রবাসীরা অনেক ধরনের বাধার মুখোমুখি হন। কোনো কাজই সহজে করতে পারেন না। অনেক খারাপ অভিজ্ঞতা হয়, অনেক মনঃকষ্ট নিয়ে তাঁরা দেশ থেকে ফিরে যান। এর বিরূপ প্রভাব এই অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ভোগ করবেন বলে আমি মনে করি। এদিকে প্রবাসে যে প্রজন্ম বড় হয়েছে, তারা এ দেশের নানামুখী জটিলতা মোকাবিলা করতে পারে না। তাই তারা দেশবিমুখ হয়ে পড়ছে। তারা কোনো ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করতে চাইবে না। তবে আমি মনে করি, মৌলভীবাজারে যদি একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ, একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য আরও গতিশীল হয়ে উঠবে।