দেশি বিনিয়োগে জোয়ার, বিদেশিতে ভাটা

২০২০ সালে দেশে এফডিআই কমেছে। তবে করোনার মধ্যেও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে দেশীয় বিনিয়োগ মোটামুটি ভালোই ছিল।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা)
ছবি: সংগৃহীত

করোনার প্রভাবে বিদায়ী বছরে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) যেন ভাটা পড়েছিল। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (বিডা) বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব কমে গেছে। তবে করোনার মধ্যেও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বছরজুড়ে বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।

করোনার কারণে বিদেশি বিনিয়োগে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে, তার একটি আংশিক চিত্র পাওয়া যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে। এতে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মোট ১১৮ কোটি মার্কিন ডলারের এফডিআই এসেছে। আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল ১৬৯ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এফডিআই কমেছে ৫১ কোটি ডলার।

সব মিলিয়ে ২০২০ সালে, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ১৫০ কোটি ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে বিডার মাধ্যমে ১০০ কোটি ডলার ও বেজার মাধ্যমে ৫০ কোটি ডলারের প্রস্তাব এসেছে। অথচ আগের বছরগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল ৪০০ কোটি থেকে ৫০০ কোটি ডলারের মধ্যে।

বিশ্বব্যাপী করোনার তাণ্ডবে সবকিছু স্থবির। টানা দুই মাসের মতো ছিল সাধারণ ছুটি। করোনার প্রভাবে বিদেশি বিনিয়োগে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তারপরও বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব একেবারে থেমে নেই। যদিও সংখ্যায় কম।
সিরাজুল ইসলাম, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান

জানতে চাইলে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনার তাণ্ডবে সবকিছু স্থবির। টানা দুই মাসের মতো ছিল সাধারণ ছুটি। করোনার প্রভাবে বিদেশি বিনিয়োগে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তারপরও বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব একেবারে থেমে নেই। যদিও সংখ্যায় কম।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা বের হচ্ছেন না। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে করোনার টিকা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব বাড়বে বলে আশা করছি।’

এদিকে বেজা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, বিদেশি বিনিয়োগ নিম্নমুখী হলেও বছরজুড়ে দেশীয় উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছেন। সব মিলিয়ে সংস্থাটির মাধ্যমে ৩৯৮ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে দেশীয় উদ্যোক্তাদের অংশ ৩৪৮ কোটি ডলার। বাকি ৫০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব বিদেশি উদ্যোক্তাদের। সেখানে মোট ১১৫ জন বিনিয়োগকারী জমির জন্য বেজার সঙ্গে ইজারা চুক্তি করেছেন। তাঁদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৩০৭ একর জমি।

সর্বোচ্চ ৩৭১ কোটি ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। এর মধ্যে দেশি বিনিয়োগ ৩৩১ কোটি ডলার আর বিদেশি বিনিয়োগ ৪০ কোটি ডলার। সেখানে ৯৪ বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি করেছে বেজা। তাদের জমি দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ১২০ একর।

কক্সবাজারের সাবরাং পর্যটন পার্ক দেশি ১৫ কোটি ডলার ও বিদেশি ৯ কোটি ডলার মিলিয়ে মোট ২৪ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে। এই শিল্পনগরে ১২ বিনিয়োগকারীকে ১১৬ একর জমি বুঝিয়ে দিয়েছে বেজা। এ ছাড়া জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৯ বিনিয়োগকারীকে ৭১ একর জমি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বিনিয়োগের পরিমাণ আড়াই কোটি ডলার।

‘করোনার মধ্যেও বড় বিনিয়োগকারীরা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছেন। এর মূল কারণ, অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমরা অবকাঠামো উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি।
পবন চৌধুরী, বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান

যোগাযোগ করা হলে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, ‘করোনার মধ্যেও বড় বিনিয়োগকারীরা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছেন। এর মূল কারণ, অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমরা অবকাঠামো উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের উন্নয়ন এখন বিনিয়োগকারীদের সামনে দৃশ্যমান। আমরা পারব কি না, তা নিয়ে একসময় অনেকের সংশয়-সন্দেহ ছিল। কিন্তু আমরা পেরেছি।’

পবন চৌধুরী আরও বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমরা গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ দিয়েছি। বিনিয়োগকারীদের দুর্নীতিমুক্ত হয়ে সেবা দিতে সক্ষম হয়েছি। সে কারণে আমরা বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি।’

২০২০ সালে বেজার সঙ্গে জমির ইজারা চুক্তি সই করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ,
চীনের জিয়াংজু ইয়াবাং কোম্পানি, হাটেক লিমিটেড, ইয়াবাং মেডিকেল প্রোডাক্টস বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, সামুদা ফুড প্রোডাক্টস, মেট্রো স্পিনিং ইত্যাদি।