নতুন দরিদ্রদের জন্য কর্মসূচির আহ্বান

হোসেন জিল্লুর রহমান

কোভিডকালে সৃষ্ট নতুন দরিদ্রদের সরকার নানাভাবে সহায়তা করলেও তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়নি। চলমান এই সংকট দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় এসব কর্মসূচি সামাজিক সুরক্ষা খাতের মূলধারায় নিয়ে আসা দরকার বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

গতকাল গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসি আয়োজিত ‘কোভিডের প্রভাব ও সামাজিক সুরক্ষার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক আঞ্চলিক নীতি ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ওয়েবিনারের বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বের প্রায় সবখানেই নগর দরিদ্ররা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে পিছিয়ে আছে।

পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, নগর দরিদ্রদের আয়ের সুযোগ বেশি হলেও শিশুশিক্ষা, পুষ্টি ও টিকাদানে তারা পিছিয়ে আছে। অন্যদিকে গ্রামীণ দরিদ্রদের আয় কম হলেও সামাজিক সূচকে তারা এগিয়ে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নগরের মেসো (সামষ্টিক ও ব্যষ্টিকের সংযোগ) অর্থনীতিতে বিপুল কর্মসংস্থান। জিডিপির বড় একটি অংশের জোগান এরাই দিচ্ছে। তাই এই খাতের উন্নয়ন ছাড়া এই মানুষের জীবনে স্থিতিশীলতা আসবে না।

সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হলো, হোসেন জিল্লুর জানান, শহরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় বেড়েছে ৯৮ শতাংশ। এতে মানুষের ঋণ বেড়েছে।

বাংলাদেশের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি মূলত গ্রামীণ দরিদ্রদের কেন্দ্র করে প্রণীত হয়েছে। অথচ নগর দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে অভিঘাত অনেক বেশি। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব শামসুল আলম বলেন, সব দরিদ্রদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি থাকা উচিত। সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, নগরে কাজের সুযোগ বেশি, তাই নগরের দরিদ্রদের জন্য আলাদাভাবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি করা হয় না। আরেকটি কারণ হলো, এতে গ্রামের মানুষের নগরে আসার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।

দেশে জাতীয় তথ্যভান্ডার নেই—এই পরিপ্রেক্ষিতে দরিদ্র মানুষের তালিকা প্রণয়নে এনজিওগুলো সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মত দেন শামসুল আলম।

অনুষ্ঠানে নেপাল ও পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদেরা কোভিডের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে আলোকপাত করেন। ইউনিসেফ নেপালের সামাজিক নীতি বিভাগের প্রধান উষা মিশ্র বলেন, নেপালে নতুন দরিদ্রদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি প্রণীত হয়নি। তবে বিদ্যমান সুরক্ষা কর্মসূচির আকার অনেকাংশে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর সঙ্গে বিদ্যুতের মতো পরিষেবায় সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। এতে মানুষ উপকৃত হচ্ছে। তবে নগরের অরক্ষিত মানুষদের কাছ থেকে পরিচয়ের নথি চাওয়া কাজের কিছু নয় বলে তিনি মত দেন।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ অরক্ষিত মানুষদের এই ধাক্কা সামলাতে ব্র্যাকের কিছু উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কার কী সমস্যা, তা চিহ্নিত করে সহায়তা করা কঠিন হলেও সেটাই সবচেয়ে কাজের। যেসব পরিবার এককভাবে প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভরশীল, তাদের আয় ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এই বাস্তবতায় ব্র্যাক অনেক পরিবারকে ছোট ব্যবসা স্থাপনে সহায়তা করেছে। এ ছাড়া ৩ লাখ ১৫ হাজার পরিবারকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে নগদ সহায়তা দিয়েছে ব্র্যাক।

অরক্ষিত মানুষদের নিয়ে কাজ করার সমস্যা হলো, আসিফ সালেহ বলেন, এরা এক জায়গায় বেশি দিন থাকে না।

বক্তারা বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে (মেসো অর্থনীতি) নিয়োজিত মানুষদের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা কম। কিন্তু এই খাতে বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ করছে।