নতুনত্ব নেই, গত বছরের ধারাবাহিকতা মাত্র

আহসান এইচ মনসুর

নতুন মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। চলমান করোনা মহামারির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কেন বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি এত বেশি ধরেছে, তা বোধগম্য নয়। আবার এ প্রবৃদ্ধি অর্জনে তারা সুনির্দিষ্ট কোনো নীতি-কৌশল ঘোষণা করেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক আশা প্রকাশ করছে, বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। তার মাধ্যমে তারল্য সংকট সমাধানের পথ খুঁজে পাবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কারণ, করোনা পরিস্থিতি এখন খুবই খারাপ। দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। কবে নাগাদ পরিস্থিতির উন্নতি হয়, তা কেউ জানে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত বেসরকারি খাতের কেউ নতুন করে বিনিয়োগ করবে না। তাই নতুন মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি খাতের ঋণের যে প্রক্ষেপণ দিয়েছে, তা অবাস্তব।

নতুন মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক প্রণোদনার কথা বলেছে। কিন্তু কোনটা নতুন আর কোনটা পুরোনো প্রণোদনা, তা বলা হয়নি। এখানে কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, শিল্প উদ্যোক্তাসহ অনেক প্রণোদনার কথা বলা হলেও নতুন-পুরোনোর বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। সেটি স্পষ্ট করা উচিত ছিল।

তবে মুদ্রানীতিতে ভালো ভালো উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই প্রণোদনার বিতরণ প্রক্রিয়া যদি স্বচ্ছ না হয়, তাহলে কোনো লাভ হবে না। ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে কী করা হবে, সে বিষয়েও কিছু বলা হয়নি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, করোনার মধ্যে প্রবাসী আয় বেড়েছে। ব্যাংকগুলোতে আমানতও বেড়েছে। ব্যাংকগুলোতে আড়াই লাখ কোটি টাকা জমা আছে। এই অতিরিক্ত তারল্য আর্থিক খাতে বুদ্‌বুদ তৈরি করলে তা তুলে নেওয়ার কথা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা আরও বলেছে, অতিরিক্ত তারল্যের কারণে মূল্যবৃদ্ধি বা সম্পদের দাম বেড়ে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন নীতি গ্রহণে দ্বিধা করবে না। কিন্তু এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কৌশল ঘোষণা করা হয়নি।

পুঁজিবাজার এখন চাঙা। এটাকে আর বেশি দূর যেতে দেওয়া ঠিক হবে না। বিমা কোম্পানিসহ অন্য যেসব কোম্পানির শেয়ার অতিমূল্যায়িত, সেসব শেয়ারের মূল্য যদি আরও বেড়ে যায়, তখন আবার ধস নামতে পারে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রচুর টাকা রয়েছে। সুদের হার এখন অনেক কম। ব্যাংকগুলো কোথাও টাকা খাটাতে পারছে না। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন দরকার। এই বিষয়ে মুদ্রানীতিতে কোনো নীতি-কৌশল নেই। তবে মানুষের হাতে টাকা নেই। মানুষের আর্থিক অবস্থা বেশ নাজুক। তাই মূল্যস্ফীতি বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

আমার মতে, এবারের মুদ্রানীতি গত বছরের মুদ্রানীতির ধারাবাহিকতা মাত্র। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের যে মূল্যায়ন করেছে, গত বছরের পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। পুরো অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। কিন্তু এখন পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে ৮ শতাংশের ঘরে।

তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন এক সময়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, যখন দেশ এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারা সতর্কতার সঙ্গে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। যেখানে কোনো নতুনত্ব নেই। নতুন কোনো পদক্ষেপও নেই। শুধু গত বছরের ধারাবাহিকতা মাত্র।