প্রবৃদ্ধি বেশি, তবু সুখ কম

মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে ঈর্ষণীয় চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এক দশক ধরেই বাংলাদেশে জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। পৃথিবীতে গুটিকয়েক দেশে যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। করোনার কারণে যেখানে দেশে দেশে প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের ওপরে রয়েছে।

একটি দেশের অর্থনীতি ভালো থাকলে সেই দেশের মানুষের সুখে থাকার কথা। কিন্তু এত প্রবৃদ্ধি হওয়ার পরও বাংলাদেশিরা অন্য দেশের নাগরিকদের তুলনায় কম সুখে আছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, এশিয়ার ৩০টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে সুখে থাকার স্কোরে বাংলাদেশের অবস্থান ২৬ তম। এডিবি আরও বলছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে। চীন, ভারত ও মালদ্বীপের পরেই সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশে। তাতে এশিয়ায় প্রবৃদ্ধিতে ৪র্থ শীর্ষ দেশ হবে বাংলাদেশ। উচ্চ প্রবৃদ্ধি হলেও তাতে দেশের নাগরিকেরা ভালো থাকতে পারছে না।

ভালো থাকা শুধু আয় দিয়েই নির্ধারণ হয় না। মানসিক ও শারীরিকভাবে ভালো থাকতে হবে। কিন্তু দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। এসব খাতে শারীরিক চাপ বেশি, আবার মানসিক তৃপ্তি পাওয়ার সুযোগ কম।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন

এডিবি গতকাল মঙ্গলবার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০২০ সেপ্টেম্বর সংখ্যা প্রকাশ করেছে। সেখানে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের পাশাপাশি ভালো থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। এডিবি বলছে, শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকার জন্য একটি অর্থনীতি আছে। ভালো থাকার বিভিন্ন ধরনের ভোক্তা পণ্যের বাজার আছে। এমনকি পর্যটন খাতও ভালো থাকার অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্ত। ২০১৮ সালের হিসাবে, ভালো থাকার অর্থনীতির আকার প্রায় সাড়ে চার লাখ কোটি ডলারের। এশিয়ার মোট জিডিপি ১০ শতাংশের খরচ হয় ভালো থাকার জন্য।

এত প্রবৃদ্ধির পরও এ দেশের মানুষের সুখ তুলনামূলক কম-এর পেছনে দুটি কারণ আছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রবৃদ্ধির সুফল তৃণমূল মানুষ কম পাচ্ছে। ২০১০ সালের পর প্রবৃদ্ধি বাড়লেও বৈষম্য বেড়েছে। প্রবৃদ্ধির সুফল সাধারণ মানুষ কম পাওয়ায় তাদের ভালো থাকার সক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, ভালো থাকা শুধু আয় দিয়েই নির্ধারণ হয় না। মানসিক ও শারীরিকভাবে ভালো থাকতে হবে। কিন্তু দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। এসব খাতে শারীরিক চাপ বেশি, আবার মানসিক তৃপ্তি পাওয়ার সুযোগ কম।

বাংলাদেশ ১০০-এর মধ্যে ৪৩ পয়েন্ট পেয়েছে। এর মানে, ভালো থাকার মানে মাঝামাঝি অবস্থানেও নেই বাংলাদেশ। এডিবি বলছে, করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে ভালো থাকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্প খাতগুলো গুরুত্বপূর্ণ।

৩০ দেশের মধ্যে ২৬ তম

এডিবি বলছে, ভালো থাকার অর্থনীতি যত বড় হয়, সেই দেশে তত বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি হয়। এডিবির ওই প্রতিবেদনে এশিয়ার দেশের নাগরিকেরা কতটা সুখে আছে, তা দেখানো হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ ৩০ দেশের মধ্যে ২৬ তম। বাংলাদেশের পেছনে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও আফগানিস্তান। এ তালিকায় শীর্ষে আছে তাইপে। এরপরেই সিঙ্গাপুরের অবস্থান।

এবার দেখা যাক, বাংলাদেশের নাগরিকেরা কতটা ভালো আছেন। এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ১০০-এর মধ্যে ৪৩ পয়েন্ট পেয়েছে। এর মানে, ভালো থাকার মানে মাঝামাঝি অবস্থানেও নেই বাংলাদেশ। এডিবি বলছে, করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে ভালো থাকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্প খাতগুলো গুরুত্বপূর্ণ।

৬.৮% প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। আগামী বছরের শুরুতেই অর্থনীতি আরও বেগবান হবে বলে মনে করছে এডিবি। এ ছাড়া গত অর্থবছরে (২০১৯-২০) প্রবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের সাময়িক হিসাব ৫ দশমিক ২ শতাংশকে মেনে নিয়েছে এডিবি। এই প্রবৃদ্ধি ধরে চলতি অর্থবছরের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। করোনা সংকট বেশি দিন ধরে বিরাজমান থাকলে তা কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধির অর্জনের পথে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলেও মনে করে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার প্রেক্ষাপটে সুসংহত সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং সরকার ঘোষিত প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দ্রুত হচ্ছে। মার্চ মাসে সবকিছু বন্ধ হলেও মে মাস থেকে অর্থনীতি খুলতে শুরু করে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে (জুলাই-ডিসেম্বর) পুনরুদ্ধার কার্যক্রম চলবে। এরপর উৎপাদন খাত ব্যাপকভাবে সচল হবে, যা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে আরও বেগবান করবে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, করোনা মহামারির কারণে থমকে যাওয়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য ও মহামারির মোকাবিলায় চাপ থাকা সত্ত্বেও সরকার উপযুক্ত অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনীতিতে গতি ধরে রেখেছে।