বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে হবে

সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা—এলডিসি উত্তরণের এই তিন সূচকেই বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে। এমনকি কোভিড-১৯ এর অভিঘাতের মধ্যেও বাংলাদেশ ঝুঁকিতে নেই। উত্তরণ হলে বাংলাদেশ কিছু বাণিজ্য–সুবিধা হারাবে। তার সঙ্গে কোভিডের ধাক্কা তো আছেই। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে—বাংলাদেশ উত্তরণের মধ্য দিয়ে যাবে, নাকি উত্তরণের পর কোভিডের ধাক্কা মোকাবিলায় নতুন আন্তর্জাতিক ঐকমত্যের আহ্বান জানাবে। আর নতুন ঐকমত্য তৈরিতে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিতে পারে।

স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায় থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল আলাপচারিতায় অংশ নেন। আলাপচারিতায় তিনি বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাবে, সেটা এখন আর আলোচনার বিষয় নয়।

এই উত্তরণের কারণে দেশ কিছু অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা হারাবে, সে জন্য এখন আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে, বাংলাদেশ কতটা দক্ষতার সঙ্গে এলডিসির কাতার থেকে বেরিয়ে আসবে। শক্তিশালী উত্তরণের জন্য দেশের ভেতরে যেমন বড় ধরনের কর্মসূচি দরকার, তেমনি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সমর্থন দরকার বলে মনে করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। পাশাপাশি দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার কিছুটা পুনর্গঠন দরকার বলেও তিনি মনে করেন।

কোভিডের অভিঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই বলছেন, এলডিসি উত্তরণের সময় পেছানো দরকার। কিন্তু সরকারের ভাষ্যে এখনো সে রকম ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশের এই উত্তরণ পেছানোর প্রয়োজন যেমন নেই, তেমনি সুযোগও নেই; বরং আমাদের উচিত হবে, শক্তি অর্জন করে এই উত্তরণপ্রক্রিয়া আলিঙ্গন করা। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা।’

কোভিডের প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কোভিডের অভিঘাত দুইভাবে মোকাবিলা করা যায়: প্রথমত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করুণা ভিক্ষা করে এই উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়া যায়; দ্বিতীয়ত, শক্তিশালী অবস্থান থেকে বাংলাদেশ এই প্রক্রিয়ায় ঢুকতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলতে পারে, ‘উত্তরণ প্রক্রিয়ায় ঢুকেছি—আমাদের সমর্থন করুন’। এই পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনেছেন বলে জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই উত্তরণকালীন দাবিনামা উত্থাপন করা দরকার দরকার বলে তিনি মত দেন। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ এই কাজে নেতৃত্ব দিতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, এটা এখন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দায়িত্ব।

কোভিডের আঘাতে দারিদ্র্য বাড়ছে, মানুষের আয় কমছে, এই পরিস্থিতিতে উত্তরণ কতটা বাস্তবসম্মত—এমন প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এসব সত্য, কিন্তু যেসব সূচকে উত্তরণ হয়, সেগুলোতে বাংলাদেশ উতরে গেছে।

সে জন্য এখন আন্তর্জাতিক সমর্থন ও উন্নয়ন কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হচ্ছে, এসডিজি বাস্তবায়নের কৌশল পুনর্বিবেচিত হচ্ছে, পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা হচ্ছে, এগুলোকে সমন্বয় করা এই মুহূর্তে প্রয়োজনীয়। বাংলাদেশ উত্তরণকালীন নতুন ঐকমত্য সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দেবে—এই আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান।