বাংলাদেশে লিঙ্কডইনের ব্যবহার বাড়ছে

ছবি: রয়টার্স

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। যথারীতি সে ক্ষেত্রে মানুষের পছন্দের শীর্ষে আছে ফেসবুক। সম্প্রতি প্রকাশিত সামাজিক মাধ্যম ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত ওয়েবসাইট নেপোলিয়ন ক্যাটের এক তথ্যে দেখা যায়, দেশে বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ৪৩ লাখ। এরপর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ফেসবুকেরই আরেক অ্যাপ মেসেঞ্জার, এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটি ৯১ লাখ। তবে পেশাজীবীদের জন্য দারুণ কার্যকরী হয়ে ওঠায় দেশে লিঙ্কডইনের ব্যবহার বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতেই মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের অংশ হয়ে গেছে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে একসময় সচেতন মানুষেরা যেখানে এক কাপ চায়ের সঙ্গে পত্রিকা দিয়ে দিন শুরু করতেন, সেখানে এখনকার তরুণ ও পেশাজীবীরা সামাজিক মাধ্যমে লগইন করে দিন শুরু করছেন। দিনের শুরুতে বিশেষ কিছু জানার আছে কি না, তা জানতে ঘুম থেকে উঠেই সামাজিক মাধ্যমে ঢুঁ মারেন। সেই সঙ্গে ফেসবুকে এখন সংবাদ শেয়ারের হার ব্যাপক। অনেকের কাছে সংবাদের সূত্র পাওয়ার প্রধান প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে ফেসবুক। তাই মূলধারার গণমাধ্যমগুলোও এখন সামাজিক মাধ্যমে পেজ খুলছে, তাদের সংবাদ শেয়ার করছে।

বাংলাদেশের মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মধ্যে ফেসবুকই বেশি ব্যবহার করেন। প্রথম ব্যবহৃত মাধ্যমও এটি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানেই মানুষের ভিড় বেশি। নেটওয়ার্কও বড়। ব্যবহারকারীরাও অনেকটা ইচ্ছেমতো এটি ব্যবহার করতে পারেন। লাইভ ভিডিও করা থেকে অনেক কিছুই ফেসবুকে করা যায়। যেখানে টুইটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে শব্দগত সীমাবদ্ধতা আছে।

নেপোলিয়ন ক্যাটের তথ্যে জানা যায়, দেশে প্রতিদিনই ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। বিদায়ী বছরের জানুয়ারিতে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৫৯ লাখ, ডিসেম্বরে তা বেড়ে ৪ কোটি ৪৩ লাখে দাঁড়িয়েছে।

তবে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে, ফেসবুকের সর্ব ব্যাপক ব্যবহারের মধ্যে দেশে লিঙ্কডইনের ব্যবহার বাড়ছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ পেশাদারদের কমিউনিটি হচ্ছে এই লিঙ্কডইন।

জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে করপোরেট জগতে ৭৯ শতাংশ নিয়োগকর্তা চাকরিপ্রার্থীর যোগ্যতা যাচাইয়ে লিঙ্কডইনের সহায়তা নেন। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, একজন কর্মীর পেশাগত দক্ষতা সম্পর্কে জানতে লিঙ্কডইনের কোনো তুলনা নেই। তাই ক্যারিয়ারের অগ্রযাত্রা মসৃণ করে তুলতে বিশ্বজুড়ে ৫০ কোটির বেশি মানুষ লিঙ্কডইন ব্যবহার করছেন। বাংলাদেশেও অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে লিঙ্কডইনের জনপ্রিয়তা। এখানে প্রোফাইল খুলে দ্রুত কার্যকরভাবে পেশাদার নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা সম্ভব। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে লিঙ্কডইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৭০ হাজার, যা এক বছর আগে ছিল ৩২ লাখ ৩৩ হাজার।

পাশাপাশি হাজার হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ফেসবুক পেজ ব্যবহার করে পণ্য বা সেবার বিপণন করছেন। এই পরিবর্তনও ইতিবাচক মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

এই যুগের মানুষ কী নিয়ে সবচেয়ে বেশি সময় কাটায়। এককথায় উত্তর হবে, ফোন, ইন্টারনেট, সামাজিক মাধ্যম, ল্যাপটপ, নোটপ্যাড। সারাক্ষণই এগুলোর মধ্যে ডুবে থাকছে মানুষ, তবে এসব মাধ্যমের সঠিক ব্যবহার কতটা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সে জন্য এগুলোর ইতিবাচক ব্যবহার নিয়ে অনেকেই সোচ্চার হচ্ছেন।

আড্ডা দেওয়া বাঙালির চিরাচরিত স্বভাব। সামাজিক মাধ্যমও অনেকটা নিছক আড্ডার মাধ্যম হয়ে গেছে (অবশ্য আড্ডারও প্রয়োজন আছে)। হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের মানবসম্পদপ্রধান মাহবুবুল ওয়াহিদ হোটেল লবিতে হাঁটতে হাঁটতে প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘দেখুন, এঁরা (কর্মচারী) রাজনীতি (২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে) নিয়ে কথা বলছেন। অথচ ক্যারিয়ার উন্নয়নে আরেকটু নজর দিলে এঁরা আরও ভালো থাকতে পারতেন।' সেই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, দেশে লিঙ্কডইনের ব্যবহার বৃদ্ধি ভালো লক্ষণ।