বাছবিচার ছাড়া ঋণ নয়

  • বহুপক্ষীয় সহযোগিতার পরিসর বাড়ছে পৃথিবীতে।

  • ২০১৮ সালে বহুপক্ষীয় সহায়তা ছিল ৭১,১৯০ কোটি ডলার।

কোভিড-১০-এর ধাক্কা মোকাবিলায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭১২ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশি সহায়তা পেয়েছে। বিদ্যমান বাস্তবতায় বাংলাদেশের মতো দেশের পক্ষে বিদেশি ঋণ বা সহায়তা পাওয়া কঠিন কাজ নয়, তবে ঋণ নেওয়ার আগে বাছবিচার করতে হবে, কার ঋণ নেওয়া ঠিক হবে, কার ঋণ নয়। কী উদ্দেশ্যে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, সেটাই প্রধান বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত।

গতকাল সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ ও ওইসিডি আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

‘কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বহুপক্ষীয় উদ্যোগ—পরিপ্রেক্ষিত দক্ষিণ এশিয়া’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ঋণ পাওয়া এখন সমস্যা নয়, বরং ঋণের অর্থ ব্যবহার করাই বড় কথা। অব্যবহৃত ঋণের বিপুল বোঝা সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি ওডিএ বা অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স ঐতিহাসিকভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু দেশের বেলায় তা আরও বেশি সত্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। বৈশ্বিক অগ্রাধিকার কী হবে, কোথায় কত টাকা যাবে—সবকিছুই নির্ধারণ করে উন্নত কয়েকটি দেশ। তবে ব্রিকস, এডিবিসহ অর্থায়নের আরও উৎস সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি বড় বড় অবকাঠামোতে চীনা বিনিয়োগ নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য তা অর্থবহ হয়ে উঠছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে বহুপক্ষীয় ঋণ নিয়ে উপস্থাপনা দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি জানান, বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের মধ্যে বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় ঋণের পরিমাণ প্রায় সমান। বহুপক্ষীয় দাতারা সাধারণত অবকাঠামো খাতে ঋণ দেয়। দ্বিপক্ষীয় দাতারা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও ঋণ দেয়, তবে কোন দেশকে কোন খাতে ঋণ দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হয়েছে—এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে অর্থায়ন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ঋণ অনেক উৎস থেকেই পাওয়া যায়, কিন্তু কার কাছ থেকে কী উদ্দেশ্যে ঋণ নেওয়া হবে, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

মহামারির পর বৈশ্বিক বহুপক্ষীয় ব্যবস্থায় পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অতীতে মহামারির পর পরিবর্তন এসেছে ঠিক, কিন্তু এবার নীতিপ্রণেতাদের মধ্যে সে রকম সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে অর্থায়নই সব নয়, অর্থ ব্যবহারও গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার নির্ধারণে আমলারা দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেন না। ফলে প্রকল্প প্রণয়ন করে দাতা সংস্থা বা দেশগুলো, স্থানীয় সংস্থা নয়। কিছু কিছু প্রকল্প ভালো হলেও সব প্রকল্প দেশের স্বার্থের সঙ্গে যায় না।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ওইসিডির পক্ষ থেকে উপস্থাপনা দেন নীতি বিশ্লেষণ ও কৌশল বিভাগের প্রধান অলিভিয়ের কাটানেও। তিনি জানান, পৃথিবীতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার তুলনায় বহুপক্ষীয় সহযোগিতার পরিসর বাড়ছে। ২০১৮ সালে বহুপক্ষীয় সহায়তার পরিমাণ দাঁড়ায় রেকর্ড ৭১ হাজার ১৯০ কোটি ডলার।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। যোগ দেন বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়া ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েবিনারে যোগ দেয়।