বাজার আরও কয়েক গুণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে

ক্রেডিট কার্ড মানুষের জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন এনেছে, যদিও এই সেবা সারা দেশে বিস্তৃত হয়নি। আবার কার্ডের সুদ ও মাশুল নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন

সেলিম আর এফ হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্র্যাক ব্যাংক

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: করোনাকালে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবসা কেমন যাচ্ছে?

সেলিম আর এফ হোসেন: কার্ড ব্যবসায় এখন কঠিন সময় যাচ্ছে। মানুষের ঘরের বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা কমে যাওয়ায় কার্ড ব্যবহারের পরিসরও কমে গেছে। তবে মহামারির সময় ই-কমার্সের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানে কার্ডের ব্যবহার কিছুটা বেড়েছে। তবে কার্ডের বিল পরিশোধে সক্ষমতা কমে যাওয়ায় আমরা বেশি প্রতিকূলতার মুখে পড়েছি। কারণ, করোনায় অনেক পেশাজীবী গ্রাহকের বেতন-ভাতা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে অনেকে বিল পরিশোধ করতে পারছেন না। এ ছাড়া গ্রাহকদের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব বেড়েছে। তাই অনেক সময় গ্রাহকেরা দেরিতে বিল পরিশোধের দিকে ঝুঁকছেন। করোনার প্রকোপ আরও বাড়লে কার্ডের ব্যবসার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

প্রশ্ন :

কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো ক্রেডিট কার্ড নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব বেশি। সেটির কারণ কী?

সেলিম আর এফ হোসেন: তথ্যের ঘাটতির জন্য অনেক সময় গ্রাহকদের মধ্যে ভীতি কাজ করতে পারে। এ জন্য গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমাদের কাজ করতে হবে। এটির কোনো বিকল্প নেই। সুদহার ও মাশুলের বিষয়ে যত বেশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবে, গ্রাহকদের মধ্যে কার্ডবিষয়ক ভীতি ততই কমবে। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, ব্র্যাক ব্যাংক গ্রাহকদের আস্থা ধরে রাখা ও কার্ডবিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়াসে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আমাদের ক্রেডিট কার্ডে সর্বনিম্ন ১৫ দিন এবং সর্বোচ্চ ৪৫ দিন সুদমুক্ত সময়সীমা নিশ্চিত করে যাচ্ছি। কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার কমিয়ে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বড় আকারের লেনদেনে বিনা সুদে৬ থেকে ৩৬ মাসের কিস্তিতে (ইএমআই) বিল পরিশোধের সুযোগ দিচ্ছি। এ ছাড়া কার্ডের মাশুলসংক্রান্ত তালিকা ওয়েবসাইটেও রাখা হয়েছে।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবসা বা ব্যবহার নিয়ে সম্ভাবনা কেমন দেখেন?

সেলিম আর এফ হোসেন: কয়েক বছর ধরেই আমরা লক্ষ করছি, গ্রাহকেরা নগদ থেকে ডিজিটাল লেনদেনের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন। করোনার কারণে আমাদের জীবনধারায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। এই পরিস্থিতিতে গ্রাহকেরা ডিজিটাল লেনদেনে আরও বেশি উৎসাহিত হচ্ছেন। আর ডিজিটাল লেনদেনের বড় একটি মাধ্যম ক্রেডিট কার্ড। সব মিলিয়ে দেশে দ্রুত সম্প্রসারণশীল ক্রেডিট কার্ডের বাজার আরও কয়েক গুণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

তথ্যের ঘাটতির জন্য অনেক সময় গ্রাহকদের মধ্যে ভীতি কাজ করতে পারে। এ জন্য গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমাদের কাজ করতে হবে। এটির কোনো বিকল্প নেই। সুদহার ও মাশুলের বিষয়ে যত বেশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবে, গ্রাহকদের মধ্যে কার্ডবিষয়ক ভীতি ততই কমবে।
সেলিম আর এফ হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্র্যাক ব্যাংক

প্রশ্ন :

ক্রেডিট কার্ড বেশি ব্যবহার করেন কারা?

সেলিম আর এফ হোসেন: খুচরা ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা চাকরিজীবীদের প্রাধান্য দিই। ফলে চাকরিজীবীরাই আমাদের ক্রেডিট কার্ড বেশি ব্যবহার করেন। আরও সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, তরুণ ও মধ্যবয়সী পেশাজীবীদের মধ্যেই কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের মূল স্বপ্ন ছিল ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা বিরাট জনগোষ্ঠীকে কার্ড সেবার আওতায় আনা। স্যার আবেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি নারীদের জন্য আমাদের নিবেদিত ব্যাংকিং সেবা ‘তারা’র আওতায় নারীদের মধ্যেও অনেক ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক তৈরি হচ্ছে।