বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়াটা ঠিক হবে না

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন
ফাইল ছবি

মহামারি করোনার কারণে নতুন বিনিয়োগ তেমন হচ্ছে না। কিছু প্রতিষ্ঠান শুধু তাদের চলমান ব্যবসা সম্প্রসারণে বিনিয়োগ করছে। বর্তমানে করোনার নতুন ধরন ব্যাপক হারে ছড়াচ্ছে। প্রতিদিন অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। ভাইরাসটির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। শিল্পকারখানা বন্ধ। করোনা নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত নতুন বিনিয়োগ আশা করা যায় না। পরিস্থিতির উন্নতি হলে হয়তো কিছুটা হবে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতিতে চলতি অর্থবছরের জন্য বেসরকারি খাতে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির যে প্রক্ষেপণ করেছে, সেটি অর্জন নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

করোনার কারণে অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই লোকসানে আছে। সে জন্য আমরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের সুদ পরিশোধের ছাড় চেয়েছিলাম। তবে ৩১ আগস্টের মধ্যে কিস্তির ২০ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে ঋণ নিয়মিত রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। ফলে খুব সহজেই মহামারির মতো কঠিন এই সময়ে ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেওয়া দরকার। না হলে ব্যবসায়ীরা ঋণখেলাপি হবেন। সেটি হলে তো সংশ্লিষ্ট ব্যাংকও খেলাপি হয়ে যায়।

আবার চলতি অর্থবছরের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বলা বলেছে, অতিরিক্ত তারল্য আর্থিক খাতে বুদ্‌বুদ তৈরি করলে তা তুলে নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমি মনে করি, বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়া ঠিক হবে না। সেটি হলে ব্যাংকঋণের সুদের হার বেড়ে যাবে। তখন ব্যবসায়ীরা নতুন সংকটে পড়বেন। নতুন বিনিয়োগ করতে চাইলেও পারবেন না তাঁরা।

প্রণোদনা তহবিলের অর্থের অপব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্বেগ জানিয়েছে। কিন্তু অপব্যবহারটা হলো কেন? শেয়ারবাজারে কেন প্রণোদনার টাকা গেল? সরকার তো রপ্তানি খাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান (এসএমই), ব্যবসার চলতি মূলধনসহ বেশ কয়েকটি শ্রেণিতে প্রণোদনা দিয়েছে। কোনো ব্যাংক যদি সেই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে থাকে, তবে সুনির্দিষ্টভাবে সেই ব্যাংককেই ধরা উচিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। বলা হচ্ছে, এসএমই খাতের জন্য প্রণোদনা তহবিলের ৭৩ শতাংশ ঋণ বিতরণ হয়েছে। সেই অর্থ কারা পেল। আমাদের হিসাব বলছে, ঋণের ৮০-৯০ শতাংশই পেয়েছে তারা, যারা কি না এসএমই খাতের মধ্যে বড় প্রতিষ্ঠান। তাহলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কেন প্রণোদনা পেল না। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের জবাবদিহি করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, নতুন মুদ্রানীতিতে উৎপাদনশীল খাতে ঋণের জোগান বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আগে শিল্পকারখানা খুলে দিতে হবে। চলমান বিধিনিষেধে শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় পণ্য সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অনেকে চাকরি হারাবে। ফলে নতুন বিনিয়োগ ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেয়ে চলমান ব্যবসা ও কর্মসংস্থান ধরে রাখার দিকে বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন। সুযোগ-সুবিধা দিয়ে হলে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে হবে।