বিদেশ থেকে প্রচুর ঋণ আনতে হবে

আহসান এইচ মনসুর

মুদ্রানীতি ঘোষণায় গভর্নর ফজলে কবির বলেছেন, প্রধান লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। তবে প্রধান যে কাজটি করতে হতো তা হলো সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া। এতে ঋণের সুদহার বাড়ত, ফলে ঋণের পরিমাণ কমে আসত, যার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যেত। কিন্তু সুদহারের বিষয়টি যেহেতু সরকার ঠিক করে দিয়েছে, তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ক্ষেত্রে হাত দিতে পারছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, গড় সুদহার এখনো ৭ শতাংশ, তবে বাস্তবতা হলো, বেশির ভাগ গ্রাহকের ঋণের সুদ ৯ শতাংশ। বড় কয়েকজন গ্রাহকের ঋণের সুদ তো আর প্রকৃত সুদহার নয়।

আমাদের প্রয়োজন টাকাকে সহায়তা করতে ডলারের ঊর্ধ্বমুখী গমন ঠেকানো। সুদহারের সীমা তুলে দিলেই এটা হয়ে যেত। চাহিদা কমাতে হলে ঋণ কমাতে হতো। এটাই বাজার অর্থনীতি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক উল্টোমুখী যাত্রা করছে।

গভর্নর বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীন, পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাহলে ব্যাংক খাতের যে দুরবস্থা, এর পুরো দায়ভার তাঁর ওপরই বর্তায়। তিনি পুরো ক্ষমতার অধিকারী হলে তাঁকেই সব দায়দায়িত্ব নিতে হবে। খুনের মামলার আসামি, বড় অর্থ পাচারকারী, ঋণখেলাপি—সবাই এখন ব্যাংকের চেয়ারম্যান। আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ফাঁকা করে ফেলা হয়েছে, এখন ব্যাংকগুলো। বিশেষ করে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো বেশি ফাঁকা হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকই বলছে, একটি ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ ঋণ খেলাপিযোগ্য। কেমন এমন হলো? এর দায়দায়িত্ব কে নেবে? আর এত খেলাপি হওয়ার পরও ব্যাংকটি টিকে থাকে কী করে। কেন চেয়ারম্যান-এমডিকে সরিয়ে প্রশাসক বসানো হচ্ছে না।

আমাদের প্রয়োজন টাকাকে সহায়তা করতে ডলারের ঊর্ধ্বমুখী গমন ঠেকানো। সুদহারের সীমা তুলে দিলেই এটা হয়ে যেত। চাহিদা কমাতে হলে ঋণ কমাতে হতো। এটাই বাজার অর্থনীতি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক উল্টোমুখী যাত্রা করছে।
আহসান এইচ মনসুর নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট

ডলারের দাম বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে বাড়াচ্ছে, তাতে সমস্যা আরও বাড়ছে। এভাবে ছোট ছোট পা ফেললে হবে না, বড় পা ফেলতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে ডলারের দাম ১২০ টাকায় পৌঁছে যাবে।

বিদেশে অর্থ পাচার ঠেকানোর উদ্যোগ নেই। যে প্রভাবশালীরা সিঙ্গাপুরে হোটেল কিনেছেন, কানাডায় বাড়ি, মালয়েশিয়া বা দুবাইয়ে সম্পদ গড়েছেন, তাঁদের ধরবে কে। আর ধরা হলে তাঁরা আয়ের উৎস কী দেখাবেন। প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশিদের অবৈধ অর্থ পাচার ঠেকানোর উদ্যোগ আছে বলে মনে হয় না।

নতুন অর্থবছরের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতি হবে। পাশাপাশি সরকারি ভর্তুকি অনেক বেড়ে গেছে। যেটা সামনে আরও বাড়বে। বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় বিদেশ থেকে প্রচুর ঋণ আনতে হবে। এ জন্য সরকার ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। তবে বিদেশি ঋণ আনতে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। আর সংস্কার করতে হলে সবার আগে রাজস্ব খাতে হাত দিতে হবে। এরপর ব্যাংক খাতের সংস্কার করতে হবে। সুদহারের সীমা, ব্যাংকের মালিকানা কাঠামো—এসবে হাত দিতে হবে।

আর নতুন অর্থবছরে মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেল চালু হবে। পদ্মা সেতু ইতিমধ্যে চালু হয়ে গেছে—এসব সম্ভাবনার জায়গা। এখান থেকে আয় আসতে শুরু করবে। তবে মেট্রোরেল পুরোটা চালু না হলে খুব বেশি উপকারে আসবে না। মানুষ দেখবে, কিন্তু কোনো কাজে দেবে না।

এ বছর হবে অর্থনৈতিক মন্দার সময়, তাই আমি খুব বেশি আশা করি না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ডলারের দাম আটকাতে পারলেই দেশের মানুষ ভালো থাকবে।