বিমার আওতায় আসতে পারে ১০ কোটি মানুষ

আজ ১ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় বিমা দিবস উপলক্ষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিমা খাতের নানা দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান এম মোশারফ হোসেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফখরুল ইসলাম।

এম মোশারফ হোসেন

প্রশ্ন :

আর্থিক খাতের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে বিমা। কিন্তু খাতটি নিয়ে খুব বেশি আশার আলো দেখা যায় না কেন?

আমরা ঠিকই আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। এই যে বিমা দিবস পালন করছি, এর পটভূমির দিকে একটু তাকাই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬০ সালের ১ মার্চ আলফা ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগ দিয়েছিলেন। রাজনীতি করা তখন কঠিন ছিল। একনায়ক আইয়ুবের আমল। দেশের আনাচে–কানাচে যেতে পারার স্বার্থেই বঙ্গবন্ধু যোগ দিয়েছিলেন বিমা কোম্পানিতে। বলা হয়, ছয় দফা লেখা হয়েছিল আলফা ইনস্যুরেন্সের অফিসে। এটা বিমা খাতের জন্য আশীর্বাদ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেন, তিনি বিমা পরিবারের সদস্য। আমরা এতে গৌরব বোধ করি। এটা ঠিক আর্থিক খাতের মধ্যে এখনো পুরোপুরি অনাবিষ্কৃত হচ্ছে বিমা। পুরো ভবিষ্যৎ এ খাতকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষায় আছে।

প্রশ্ন :

কীভাবে অপেক্ষায় আছে? দেশে জীবনবিমা পলিসি খুব হয় না, যা হয় তার অর্ধেক আবার তামাদি হয়ে যায়।

এটা অসত্য বলেননি। যদিও এতে দুই পক্ষেরই দোষ আছে। কোম্পানিগুলো পলিসিহোল্ডার আনে এজেন্টদের মাধ্যমে। এজেন্টদের প্রথম বছরের প্রিমিয়াম আয় বেশি থাকে। পলিসি করিয়ে এক কোম্পানির এজেন্ট অন্য কোম্পানিতে চলে যায়। তখন তাঁরা নতুন কোম্পানিতে গিয়ে আবার প্রথম বছরের প্রিমিয়াম আয় করতে চান। এভাবে পলিসির ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়। অন্যদিকে একশ্রেণির পলিসিহোল্ডারের অসচেতনতাও এ জন্য দায়ী। কিছু কোম্পানি আছে, যারা চায় পলিসি তামাদি হলে তাদেরই লাভ। এতে পলিসিহোল্ডাররা কোনো টাকা পান না। তবে গোটা খাতের জন্য এটা খারাপ। পলিসি তামাদি হওয়া ঠেকাতে গত বছর একটা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রথম বছরের প্রিমিয়াম আয়ের একটা অংশ দ্বিতীয় বছরে দেওয়া হবে।

প্রশ্ন :

মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বিমা খাতের অবদান মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ! কোন যুক্তিতে এই পরিসংখ্যানকে আপনি স্বাভাবিক বলবেন?

এই হার এখন দশমিক ৬ শতাংশ। বছরে প্রিমিয়াম আয় বাড়ছে ৫ শতাংশ হারে। আরও বৃদ্ধি দরকার। তবে এটা ঠিক যে বিশ্বে দ্রুত বর্ধনশীল জিডিপির প্রবৃদ্ধির একটি দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। এই প্রবৃদ্ধির হারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিমা খাত এগোতে পারছে না।

প্রশ্ন :

অন্তত জিডিপির ১ শতাংশ হতে কত সময় লাগতে পারে?

বিমা খাতের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি ডিজিটালাইজেশন প্রকল্প দিয়েছেন। এটি বাস্তবায়িত হলে সেবাগুলো দ্রুত দেওয়া যাবে। বেশি সময় লাগবে না। বিমার আওতায় আসার মতো দেশে ১০ কোটি মানুষ আছেন। বর্তমানে দুই কোটি মানুষ বিমার আওতায় থাকলেও অনায়াসে এটা চার কোটিতে উন্নীত হওয়া সম্ভব।

প্রশ্ন :

এই দুর্বল আইডিআরএ দিয়ে কীভাবে তা আশা করা সম্ভব?

তা ঠিক বলেছেন। জীবন বীমা করপোরেশন ও সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ মোট ৭৯টি প্রতিষ্ঠান এবং ১৩৮টি জরিপকারী (সার্ভেয়ার) প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। অথচ আমাদের জনবল এখনো ৫৮ জন। তা–ও আবার সবাই অস্থায়ী। ১০ বছরে দক্ষতা অর্জন করলেও তাঁদের চাকরির নিশ্চয়তা নেই। মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে এসে ৬-৭ জন কাজ করছেন। নিয়ন্ত্রক হিসেবে শক্ত অবস্থান না হওয়া পর্যন্ত পুরো খাতের সার্বিক দিক নিয়ে ওইভাবে পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন। আমি আশাবাদী যে সমাধান একটা বের হবেই। নিয়োগ প্রবিধানমালা হয়ে যাচ্ছে। চেষ্টা থাকবে তাঁদের রেখেই কীভাবে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া যায়। বর্তমানে যাঁরা আছেন, তাঁদের বাদ দেওয়াটা বড় ধরনের অন্যায় হবে। তাঁদের হারাতে হলে বিমা খাত আরও পিছিয়ে পড়বে।

প্রশ্ন :

আপনি বলছেন তাঁদের হারাতে চান না, আর মন্ত্রণালয় বলছে তাঁদের রাখা যাবে না। চূড়ান্ত বিচারে তো মন্ত্রণালয়ের কথাই তো ফলবে। এই করোনার সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক আদেশে আইডিআরএর সবার বেতন-ভাতা বরং অর্ধেক করে দেওয়া হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম মিলে একটা উপায় বের করলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তা মেনে নেবে বলে আমি আস্থা রাখতে চাই। আইডিআরএ শক্তিশালী হবে তাঁদের নিয়েই। আর আইডিআরএ শক্তিশালী না হলে কোনো সাফল্যই দেখানো যাবে না বিমা খাতে।

প্রশ্ন :

আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনাকেও ধন্যবাদ।