ঈদের আগে ব্যবসা না হলে অনেকে পথে বসবে

আজহারুল হক আজাদ সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতি (এফইএবি)

করোনার কারণে গত বছর কেউই বৈশাখের ব্যবসা করতে পারেননি। বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে লোকসান গুনেছেন। যেহেতু করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল, সেহেতু সব ব্যবসায়ী সাধ্যমতো প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। নিত্যনতুন নকশার পণ্য তৈরি করেছিলেন। তাঁদের আশা ছিল, গতবারের লোকসান কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু হঠাৎ সবকিছু অনিশ্চিত হয়ে গেল।

করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং সরকারের বিধিনিষেধের কারণে নববর্ষ উদ্‌যাপনের আমেজটা নষ্ট হয়ে গেছে। পাঁচ দিন বন্ধ থাকায় বেচাবিক্রির গতিটাও থেমে গেছে। সে কারণে আজ শুক্রবার থেকে দোকানপাট ও বিপণিবিতান খোলা হলেও ক্রেতারা কি আসবেন? এলেও সংখ্যাটা খুবই নগণ্য হবে। তার মানে, ক্ষতি যা হওয়ার ইতিমধ্যে হয়ে গেছে।

পয়লা বৈশাখের আগে পাঁচ দিন সকাল ৯টা থেকে ৮ ঘণ্টা দোকানপাট ও বিপণিবিতান খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে পয়লা বৈশাখের পরদিন থেকে দোকানপাট ও বিপণিবিতান খোলা রাখা যাবে কি না, সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। পবিত্র ঈদুল ফিতর আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। সারা বছর পোশাকের যে ব্যবসা হয়, তার অর্ধেকই এই উৎসব ঘিরে হয়ে থাকে। তাই রোজায় আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট ও বিপণিবিতান সচল রাখতেই হবে।

করোনার সংক্রমণ রোধে লকডাউন একমাত্র ব্যবস্থা নয়। সারা বিশ্বই বিকল্প ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে। আরেকটি বিষয় ভাবুন, সরকারের বিধিনিষেধের মধ্যে শিল্পকারখানা বিশেষ করে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা খোলা রাখা হয়েছে। কারণ, ইউরোপ-আমেরিকায় দোকানপাট খোলা থাকায় পোশাকের চাহিদা রয়েছে। তাহলে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে পোশাকের চাহিদা রয়েছে। সে বিষয়ে আমরা কেন ভাবব না?

করোনার ক্ষতি পোষাতে গত বছর সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। তবে সেই তহবিল থেকে আমাদের ৯৯ শতাংশ ব্যবসায়ী কোনো সহায়তা পাননি। যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদেরও মূলত প্রণোদনার ঋণ দিয়ে আগের নেওয়া ঋণ সমন্বয় করা হয়েছে। ফলে প্রণোদনার কোনো সুফলই আমরা পাইনি। এই পরিস্থিতিতে ঈদের আগে ব্যবসা করতে না পারলে অনেক ব্যবসায়ীর পথে বসে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে দোকানপাট বন্ধ রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা আমরা দেখেছি। স্বাস্থ্যবিধি বিশেষ করে মাস্ক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করতে একই রকম তৎপরতা প্রয়োজন। মোদ্দাকথা হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে যা যা করণীয়, সেটি করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। অন্যথায় ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।