ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার নতুন উপায় খুঁজতে হবে

মো. সিরাজুল হক
সরকার বেশ আগেই বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের জন্য লক্ষ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করে, যাতে তাঁরা করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু বড়রা প্রণোদনার সুবিধা পেলেও মাঝারি ও ছোটরা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. সিরাজুল হক। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবদুর রব

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: লকডাউন তুলে দেওয়ার পর দোকানপাট খুলেছে। লালমনিরহাটে এখন কী অবস্থা?

মো. সিরাজুল হক: লকডাউনের আগে ব্যবসা–বাণিজ্যের যে অবস্থা ছিল, সেটি এখন আর নেই। ক্রেতা–বিক্রেতা দুই দিক থেকেই অনেক ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান বা দোকানের মালিকেরা কর্মচারী ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে খরচ কমিয়ে বেচাকেনার কমতি বা ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। লকডাউন উঠে গেলেও সব আবাসিক হোটেল, খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁ চালু হয়নি। আবার যেগুলো খুলেছে, সেগুলো আগের জায়গায় ফিরতে পারেনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীর ধীরে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। তবে ব্যবসা–বাণিজ্যে লাভ–ক্ষতি দুটিই মেনে চলতে হবে, ঘুরে দাঁড়াতে হবে—সেটাই বাস্তবতা।

প্রশ্ন :

হোটেল–রেস্তোরাঁ ও ছোট–বড় দোকানে অনেক কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। কর্মসংস্থান হারিয়ে অনেকেই দিশেহারা। তাঁদের নিয়ে চেম্বারের কোনো ভাবনা আছে?

সিরাজুল হক: তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে আমরা চেম্বারের পক্ষ থেকে কর্মহীন দোকান কর্মচারীদের খাদ্যসামগ্রী দিয়েছি। প্রশাসনসহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করে কর্মচারীদের পাশে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করেছি। এসব তৎপরতা ছিল আপৎকালের জন্য। লকডাউনের পর আমরা চেম্বারের সদস্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানগুলোর মালিকদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করেছি। তাঁদের বাস্তবতার নিরিখে ছাঁটাই হওয়া কর্মচারীদের ফিরিয়ে নিতে আহ্বান জানিয়েছি। এতে কিছু কাজ হয়েছে। অনেকে ব্যবসা–বাণিজ্যে আরও কিছুটা উন্নতি হলে ছাঁটাই করা কর্মীদের আবার কাজে নেওয়ার বিষয়টি ভেবে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এ জন্য সময় লাগবে বলে তারা জানিয়েছে। আমরা সবকিছু মনিটরিং করছি, কাউকে চাপ দিয়ে কিছু করাতে চাই না।

প্রশ্ন :

করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে, তা থেকে কি উত্তরণ সম্ভব? হলে সেটা কীভাবে?

সিরাজুল হক: আমি মনে করি, সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তা থেকে যাঁদের যতটুকু প্রয়োজন, তাঁদের ঠিক ততটুকু দিলে করোনা সংকটে পুঁজি হারানো ব্যবসায়ীরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন। তবে একটা অংশ আর কখনোই আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। প্রণোদনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যেসব শর্ত মানতে বলছে, তা অনেক ব্যবসায়ীর পক্ষেই সম্ভব নয়। করোনাকালে ব্যবসায়ীদের পুঁজি ভেঙে খেতে হয়েছে। কেউ কেউ মানবিক কারণে কর্মচারীদের অর্ধেক হলেও বেতন–ভাতা দিয়েছে, তাদের পক্ষে এগুলো আর সমন্বয় করা সম্ভব না। এ অবস্থায় ব্যবসা–বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার নতুন উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

প্রশ্ন :

লালমনিরহাটের ব্যবসায়ীরা সরকারি সুযোগ–সুবিধা কেমন পাচ্ছেন?

সিরাজুল হক: এখন পর্যন্ত সরকারি সুযোগ–সুবিধা পাওয়া যায়নি বললেই চলে। তবে সরকারি প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সে জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ক্ষতির শিকার বা আংশিকভাবে পুঁজি হারানো ছোট, বড় ও মাঝারি মানের ৩১৫ জন ব্যবসায়ী সরকার ঘোষিত প্রণোদনা পাওয়ার জন্য লালমনিরহাট চেম্বারের মাধ্যমে আবেদন করেছেন। তাঁদের মধ্যে খুব কমসংখ্যক ব্যবসায়ী সুবিধা পেয়েছেন। শর্ত কিছুটা শিথিল না করলে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা সুবিধা পাওয়া সহজ হবে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভেবে দেখতে হবে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: লালমনিরহাটে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা কাজে লাগানো ও এ ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে, সেগুলো কাটিয়ে ওঠার উপায় কী?

সিরাজুল হক: লালমনিরহাটে চা, ভুট্টা ও শীতকালীন শাকসবজিনির্ভর কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। পোশাক কারখানাও করা সম্ভব। কারণ এই জেলায় জমির মূল্য এখনো অন্যান্য জেলার চেয়ে কম, আবার সস্তায় কর্মী পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে—এখানে উদ্যোক্তার যেমন অভাব আছে তেমনি পুঁজিরও সংকট রয়েছে। তাই দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে লালমনিরহাটের পরিত্যক্ত বিমানবন্দর চালু করতে হবে। মোগলহাট শুল্ক ও স্থলবন্দর চালু করতে হবে। বন্ধ হওয়া মোগলহাট রেলস্টেশনও চালু করতে হবে। এ ছাড়া সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবি আছে। গ্যাস–সংযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে, সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে।