ব্যবসায় পুরুষের অর্ধেক আইনি সুরক্ষা নারীর

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সুরক্ষা দিতে গত দুই বছরে বাংলাদেশে বড় কোনো আইনি সংস্কার করা হয়নি। ফলে কর্মক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীর আইনি সুরক্ষা পাওয়ায় বিশ্বের তলানির দেশগুলোর একটিই রয়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে মাত্র আফগানিস্তান। ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় মাত্র অর্ধেক আইনি সুরক্ষা পান এ দেশের নারীরা।

বিশ্বব্যাংকের ‘ওমেন, বিজনেস অ্যান্ড দ্য ল ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এই চিত্র উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৯০টি দেশের নারীর কর্মক্ষেত্র ও ব্যবসা-বাণিজ্যে আইনি সুরক্ষার চিত্র তুলে ধরা হয়। এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে মাত্র ১৮টি দেশ।

গত দুই বছরে নয়টি দেশ নারী-পুরুষের সমতায় সবচেয়ে বেশি আইনি সংস্কার করেছে। এই তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল থাকলেও বাংলাদেশ নেই। সংস্কারে বেশি এগিয়ে যাওয়া ওই সব দেশের তালিকায় আছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ সুদান, সাওতুমে অ্যান্ড প্রিন্সেপ, বাহরাইন, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, জিবুতি, জর্ডান ও তিউনিসিয়া।

আটটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এগুলো হলো কাজের জন্য বিচরণ-সুবিধা; কর্মপরিবেশ; বেতন-মজুরি; বিবাহ; অভিভাবকত্ব; উদ্যোক্তা; সম্পদ ও সরকারি ভাতা। এই আট সূচকের মধ্যে কাজ খোঁজার সূচকে বাংলাদেশে নারী ও পুরুষের আইনি সমতা আছে। কাজ খুঁজতে নারীদের কোনো বাধা নেই। বাকি কোনো সূচকেই নারী-পুরুষের আইনি সমতা নেই। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বেতন-মজুরি ও ভাতাসুবিধার ক্ষেত্রে। বেতন-মজুরি এবং কর্মকালীন ও অবসরকালীন ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের তুলনায় ৪ ভাগের ১ ভাগ আইনি সুরক্ষা পান। এই দুর্বলতায় ওই দুটি সূচকে বৈষম্য সবচেয়ে বেশি। তাঁরা আইনি প্রতিকার কম পান। যেমন নারীরা পুরুষের চেয়ে কম মজুরি পান; কর্মঘণ্টায় বৈষম্য আছে; পুরুষের তুলনায় নারীর জন্য কর্মক্ষেত্র তুলনামূলক কম নিরাপদ; শিল্প খাতে নারীর কাজ পাওয়ার সুযোগ কম; বয়স্ক নারীরা অপেক্ষাকৃত কম রাষ্ট্রীয় সুবিধা পান।

সার্বিকভাবে বাংলাদেশ নারী-পুরুষের আইনি সুরক্ষায় ৪৯ দশমিক ৪ পয়েন্ট পেয়েছে। এর মানে হলো, সমান অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের তুলনায় অর্ধেক আইনি সুরক্ষা পান না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমাতে শক্তিশালী আইন নেই। ফলে ঘরের বাইরে এসে নারীরা কাজ করতে নিরাপদ বোধ করেন না। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কোনো আইন করা হয়নি।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আটটি দেশে নারী-পুরুষের আইনি সুরক্ষা সমান। দেশগুলো হলো বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ ও সুইডেন।

সংস্কারে এগিয়ে ৯ দেশ

যুগের পর যুগ নারীরা পুরুষদের তুলনায় পিছিয়ে আছেন। নারীর এগিয়ে যাওয়ায় আইনি বাধাও আছে। এই বাধা দূর করতে গত দুই বছরে বেশি আইনি সংস্কার করেছে নয়টি দেশ। যেমন সৌদি আরবে নারী উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৬০ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার পর নারী-পুরুষ সমান অবসরকালীন সুবিধা পাবেন। কর্মক্ষেত্রে কেউ যৌন নির্যাতনের শিকার হলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাতে নারীদের কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি স্বামীর লিখিত অনুমতি ছাড়াই ওই দেশের নারীরা বিদেশে ভ্রমণ করতে পারবেন। এ ছাড়া কৃষি, শিল্প, জ্বালানি খাতে কাজ করতে ওই দেশের নারীদের বাধা নেই।

সব মিলিয়ে গত ২ বছরে ৪০টি দেশ ৬২টি বড় সংস্কার করেছে। এত সংস্কারের পরও বৈশ্বিক বিবেচনায় নারীরা পুরুষের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম আইনি সুরক্ষা পান।