ভারতে আবারও শিল্পোৎপাদন হ্রাস পেয়েছে

ভারতের অর্থনীতিতে আপাতত স্বস্তির খবর নেই। খুচরা মূল্যস্ফীতিতে যখন একটা ভালো খবর এল, তখনই আরেকটি খারাপ খবরে সেই ভালো খবর ম্লান হয়ে গেল।

২০২০ সালের নভেম্বর মাসে খুচরা মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা নেমে আসে ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশে। ১৫ মাসে সবচেয়ে কম। দেশটির চলতি অর্থবছরে এই প্রথম ৬ শতাংশের নিচে নামল মূল্যস্ফীতি। কিন্তু একই সঙ্গে উদ্বেগের খবর হলো, টানা দুই মাস বৃদ্ধির পর নভেম্বরে শিল্পোৎপাদন আবার ১ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। কলকারখানার উৎপাদন, মূলধনি পণ্য ও এমনকি ভোগ্যপণ্য উৎপাদন কমেছে। ইকোনমিক টাইমস সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে।

নভেম্বরে কলকারখানার উৎপাদন কমেছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। এটাই উদ্বেগের প্রধান কারণ, আর্থিক কর্মকাণ্ড ও কর্মসংস্থান বাড়াতে কলকারখানায় উৎপাদন প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে জরুরি। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে তা বেড়েছিল। বিদেশি বিনিয়োগের মূল জায়গা হচ্ছে মূলধনি পণ্য বা যন্ত্রপাতির উৎপাদন, যেখানে উৎপাদন কমেছে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। এমনকি দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি ভোগ্যপণ্যের উৎপাদনের ক্ষেত্রে চাহিদার সংকট আরও কিছুকাল থাকবে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। খনন খাত সংকুচিত হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। এপ্রিল-নভেম্বরে শিল্পোৎপাদন কমেছে মোট ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

মঙ্গলবার ভারতের পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয় মূল্যস্ফীতি হ্রাসের খবর দেওয়ার পর আবার জোরালো হয়েছে ব্যাংক সুদ হ্রাসের আহ্বান। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে সেই পুরোনো কথা, সুদ কমানো হলে বিনিয়োগ বাড়বে।

সেপ্টেম্বরে ভারতে শিল্প বৃদ্ধির হার ছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ, অক্টোবরে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ (সংশোধিত)। সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, এতে আশার সঞ্চার হয়েছিল, এবার হয়তো ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ধারায় ফিরবে অর্থনীতি। চাহিদা বাড়লে তবেই বাড়ে উৎপাদন। কিন্তু নভেম্বরের সংকোচন যেন দেশটির সেই আশার গুঁড়ে বালি হয়ে এল। বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখা যাবে কি না, তা নিয়েই ছিল ভয়। যে কারণে টানা কয়েক মাস উত্থান না হওয়া পর্যন্ত এই প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে অনেকেই নিশ্চিন্ত হতে পারছিলেন না। দেশটির আবাসনশিল্পের উপদেষ্টা নাইট ফ্র্যাঙ্ক ইন্ডিয়ার গবেষণা বিভাগের প্রধান অর্থনীতিবিদ রজনী সিনহার দাবি, সংকোচন অপ্রত্যাশিত নয়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে আগের মাসগুলোতে উৎপাদন থমকে ছিল। এতে চাহিদা অনেকটা পুঞ্জীভূত হয়ে ছিল। উৎসবের মৌসুমে সেই পুঞ্জীভূত চাহিদার বিস্ফোরণ ঘটেছিল বলে শিল্পোৎপাদনে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছিল বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

অবশ্য খুচরা মূল্যস্ফীতি রিজার্ভ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া ৪ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে। রজনী বলছেন, সবজির দাম কমার কারণে মূল্যস্ফীতি কমেছে। শীতকালীন ফলন ও সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কমেছে। যে কারণে নভেম্বরে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার যেখানে ছিল ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, ডিসেম্বরে তা নেমেছে ৩ দশমিক ৪১ শতাংশে।

এই পরিস্থিতিতে শিল্প মহলের যুক্তি, ব্যবসায় প্রাণ ফেরাতে এবার আরেক দফা সুদ কমানো জরুরি। সুদ কমাতে তারা যে এই হারের দিকে তাকিয়ে, সেই বার্তা আগেই দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক। যদিও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমার হার বহাল থাকা নিয়ে অনেকে সংশয়ী। অনেকের দাবি, সুদ আরও কিছুদিন এ রকমই থাকবে। কারণ, অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি বা বার্ড ফ্লুর মতো ঘটনা বাজারকে চাপে রাখতে পারে।