সিএ পেশায় এগোচ্ছেন নারীরা

পেশা হিসেবে সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের (সিএ) মর্যাদা রয়েছে বিশ্বজুড়েই। এ পেশায় দেশের নারীরাও জায়গা করে নিচ্ছেন। দেশে বর্তমানে ২ হাজার ১০০ জন সিএ রয়েছেন, তার মধ্যে নারী সিএ ১৩৭ জন। ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, ১৯৭৩ সালে আইসিএবি প্রতিষ্ঠার সময় দেশে মোট সিএ ছিলেন ৭৮ জন, যাঁদের মধ্যে কোনো নারী ছিলেন না। প্রথম নারী সিএ দেখতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত। দেশের প্রথম নারী সিএর নাম সুরাইয়া জান্নাত, যিনি বর্তমানে বিশ্বব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের প্রধান আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন। এদিকে প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছর পর ২০১১ সালে আইসিএবির প্রথম নারী সভাপতি হন পারভীন মাহমুদ। বর্তমানে তিনি শাশা ডেনিমস এবং ইউসেফ বাংলাদেশেরও চেয়ারপারসন।

আইসিএবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দেশে নারী সিএ ছিলেন মাত্র ৮ জন। ২০০৯ সালে হয় ২৮। তবে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে নারী সিএ বেড়ে হয় ৮৫, বর্তমানে ১৩৭। ২০০৮ সালে আইসিএবির সাবেক সভাপতি এ বি এম আজিজউদ্দিন তাঁর নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘একনাবিন’-এ নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ তৈরি করে দেন। এরপর নারী সিএদের জন্য ২০১১ ও ২০১২ সাল দুটি উল্লেখযোগ্য বছর। এ বছরই আইসিএবির প্রথম নারী সভাপতি হন পারভীন মাহমুদ। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশি হিসেবে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশীয় ফেডারেশন অব অ্যাকাউনট্যান্টসের (সাফা) পর্ষদে প্রতিনিধিত্বও করেন তিনি। বছরওয়ারি হিসাব করলে ২০১২ সালেই সবচেয়ে বেশি নারী সিএ হন, সংখ্যায় ২৪ জন। অর্থাৎ ২০১১ সালে নারী সিএ ছিলেন যেখানে ৪০ জন, এক বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে হয় ৬৪ জন।

পারভীন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই সময়ে সংখ্যা দেখে মনে হতে পারে যে দেশে নারী সিএ কম। সংখ্যাটা কিন্তু অস্বস্তিদায়কও নয়। আগে সময় বেশি লাগত বলে শিক্ষার্থীদের ভীতি ছিল। এখন যুগ বদলেছে। নারীরাও ভালোই এগিয়ে আসছেন এ পেশায়।’

দেশের নারী সিএদের জন্য আরেকটি উল্লেখযোগ্য বছর হলো ২০২১। এ বছর আইসিএবির সহসভাপতি মারিয়া হাওলাদার সাফার ওমেন লিডারশিপ কমিটির চেয়ারপারসন মনোনীত হন। এই পদে তিনিও প্রথম বাংলাদেশি। সাধারণত ভারতীয়রা এ পদে এত দিন নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।

আইসিএবির সহসভাপতি মারিয়া হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিএ পাস করে কেউ চাকরি করতে চাইলে ৬ সংখ্যার বেতন দিয়ে শুরু হয়। একজন নারী যিনি কি না স্বাবলম্বী হতে চান, তাঁর জন্য এর চেয়ে ভালো কোনো পেশা হতে পারে না।’ দেশে এই মুহূর্তে ১২ হাজার সিএ দরকার—এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইসিএবি এখন এ পেশায় নারীদের বেশি করে স্বাগত জানাচ্ছে।

আইসিএবি সূত্রে জানা গেছে, দেশের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ইনস্টিটিউটের প্রথম নিরীক্ষা অনুশীলনকারী নারী আক্তার সানজিদা কাসেম বর্তমানে কাসেম অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার। শামা রুখ আলম ১৯৮৪ সালে কানাডা থেকে সিএ পাস করে বর্তমানে ডানকান ব্রাদার্স বাংলাদেশের গ্রুপ অর্থ পরিচালক। মিনারা বেগম সিএ কোর্স সম্পন্ন করা প্রথম বাংলাদেশি নারী, যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিতাস গ্যাসের অর্থ পরিচালক পদে থাকা অবস্থায় অবসরে গেছেন তিনি।

দেশের প্রথম নারী সিএ সুরাইয়া জান্নাত প্রথম আলোকে বলেন, দেশ এগোচ্ছে, নারীরাও এগোচ্ছেন। একটু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে নারীরা সিএ পেশায় আরও এগোতে পারতেন। তবে সরকারের চেয়েও আইসিএবির ভূমিকা এখানে বড়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দরকার আছে, তবে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে আইসিএবিকে। সিএ পেশার গুরুত্ব বোঝাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইসিএবিকে প্রয়োজনে প্রচারণা চালাতে হবে।