স্বল্প সুদে ঋণ দিলে অনেকেই ফ্ল্যাট কেনার সাহস করবেন

সাধ ও সাধ্যের অমিলে একখণ্ড জমি বা ফ্ল্যাট এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। আবাসন খাত নিয়ে কথা বলেছেন নতুনধরা অ্যাসেটসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাদী-উজ-জামান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভংকর কর্মকার

মো. সাদী–উজ–জামান

প্রশ্ন :

করোনা মহামারিতে ব্যবসা কেমন যাচ্ছে?

সাদী–উজ–জামান: করোনাকালে বিশ্বজুড়েই ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। লকডাউনের শুরুতে আমাদের বিক্রি পড়ে গিয়েছিল। সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা জটিল অবস্থার মধ্যে পড়েছিলাম। তখন আমরা শুধু টিকে থাকার চেষ্টা করেছি। স্বপ্ন দেখার কোনো সুযোগ ছিল না। লকডাউন ওঠে যাওয়ার পর ব্যবসা একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। কর্মীরা ফিরে আসায় প্রকল্পের কাজে গতি আসে। শুরুতে এক থেকে দুই মাস অধিকাংশ গ্রাহক কিস্তির টাকা দেননি। কারণ, কী হয় না হয়, এমন অজানা ভয়ে কেউ সঞ্চয় ভাঙতে চাইছিলেন না। পরে জুনে জাতীয় বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ায় বাজারে দ্রুত ইতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে। এই সুযোগ অনেকেই নিয়েছেন। ফলে গত ছয় মাস খুব ভালো ব্যবসা হয়েছে। বর্তমান সময়ে গত বছরের জানুয়ারির মতোই আমাদের ব্যবসা হচ্ছে।

প্রশ্ন :

জমি কেনা নিয়ে মানুষের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক রয়েছে। গত দু-তিন দশকে জমি কিনে অনেক মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন। নেতিবাচক ভাবমূর্তির কারণে আপনাদের ব্যবসা কি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে?

সাদী–উজ–জামান: অখ্যাত ও ভুঁইফোড় কোম্পানিগুলোর প্রতারণার কারণে প্লট প্রকল্পে আস্থার সংকট রয়েছে। সে জন্য আমাদের সংগ্রাম করতে হয়। জমি বেচাকেনা বা প্লট প্রকল্পের ব্যাপ্তি বিশাল। তাই কেউ চাইলেই সহজে প্রতারণা করতে পারে। অথচ প্রতারণাটাকে ব্যতিক্রম হিসেবে দেখার কথা। কিন্তু সেটিই উদাহরণ হয়ে গেছে। মূলত কিছু আবাসন ব্যবসায়ীর অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছি। তারা জমি ক্রয়ে অনিয়ম করছে, অন্যের জমিতে কিংবা আইলে জোর করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিচ্ছে। এ জন্য গ্রাহকদের মনে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রশ্ন :

প্লটের ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনার উপায় কী?

সাদী–উজ–জামান: প্লট প্রকল্পের কোম্পানিগুলোর অধিকাংশই জানায়, তারা অননুমোদিত। কেন তারা অনুমোদন নিতে পারছে না? আসলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র নিতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দীর্ঘ সময় লাগে। নিয়মবহির্ভূত লেনদেনের ঘটনা তো আছেই। সব সেবা যদি একছাতার নিচে পাওয়া যেত, তাহলে কোম্পানিগুলো সহজে অনুমোদন নিতে পারত। তখন তাদের মধ্যে স্বচ্ছভাবে ব্যবসা করার তাড়না তৈরি হতো। গ্রাহকেরাও সেটির উপকার পেতেন। তা ছাড়া ভালো কোম্পানির জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ও গ্রাহকদের প্লট বুঝিয়ে দেওয়ার হারের ওপর ভিত্তি করে কোম্পানিগুলোকে রেটিং সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসতে পারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সেটি হলে গ্রাহকেরা বুঝতে পারবেন, নিজের কষ্টের টাকা বিনিয়োগে তাঁরা কোন কোম্পানির কাছে যাবেন।

প্রশ্ন :

সাধারণ ক্রেতাদের জন্য কী করছেন?

সাদী–উজ–জামান: ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে আমাদের হাউজিং প্রকল্প রয়েছে। ৭০ শতাংশ দাম পরিশোধ করার পর আমরা প্লটের নিবন্ধন করে দিচ্ছি। বাকি অর্থ ১২-২৪ মাসের কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই কেরানীগঞ্জের তেঘুরিয়ায় কনডোমিনিয়াম প্রকল্প করব। সেখানেও একই ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে। এই পরিকল্পনার কারণ হচ্ছে, আর্থিক সামর্থ্যের সঙ্গে না মিললেই গ্রাহকেরা কম দামের প্লট বা ফ্ল্যাটের দিকে ঝোঁকেন। তখনই প্রতারণার ঘটনা ঘটে।

প্রশ্ন :

ফ্ল্যাটের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে এখন কী করা উচিত?

সাদী–উজ–জামান: ভালো মানের ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের নির্মাণ ব্যয় গড়ে ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকার মধ্যে। শুধু জমির উচ্চমূল্যের কারণে সেই ফ্ল্যাটের দাম ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা বা আরও বেশি হয়। সরকার যদি স্বল্প দামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আবাসন প্রকল্পের জন্য জমি বরাদ্দ করে, তবেই কম দামে ফ্ল্যাট দেওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে। স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা করা গেলেও অনেক গ্রাহক ফ্ল্যাট কেনার সাহস করতে পারতেন।