১০ বছরেও আয়কর আইন হয়নি

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রধান কার্যালয়।
ছবি: এনবিআরের সৌজন্যে

২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নতুন আয়কর আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু গত ১০ বছরে সেই আয়কর আইন চালু করা সম্ভব হয়নি। এখনো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নতুন আয়কর আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে পারেনি।

তবে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসেই আয়কর আইনের খসড়া চূড়ান্ত হবে। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে মন্ত্রিপরিষদ সভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

১০ বছর ধরে প্রায় প্রতিটি বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী নতুন আয়কর আইন প্রণয়নের উদ্যোগের কথা জানান। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

বর্তমানে ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ দিয়ে দেশের কর খাত চলছে। এখন এনবিআর একটি আধুনিক আয়কর আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে আয়কর আইনের ইংরেজি সংস্করণ প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন বাংলা সংস্করণের উদ্যোগও শেষের পথে।

১০ বছর ধরে প্রায় প্রতিটি বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী নতুন আয়কর আইন প্রণয়নের উদ্যোগের কথা জানান। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আয়কর আইন যুগোপযোগী করে ব্যবসা ও উন্নয়নবান্ধব করার লক্ষ্যে নতুন আইন প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’

এর আগে ২০১৭ সালে মন্ত্রিপরিষদ থেকে দ্রুত আইনটির খসড়া পাঠানোর জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছিল। তবু কাজ শেষ করতে পারেনি এনবিআর।

আয়কর আইনের খসড়া চূড়ান্ত করার জন্য গত ১০ আগস্ট এনবিআরের সদস্য রঞ্জন কুমার ভৌমিককে প্রধান করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি চলতি মাসেই প্রতিবেদন জমা দেবে। আগামী অর্থবছর থেকে নতুন আইনটি চালু করার চিন্তাভাবনা চলছে।

বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর নতুন কাস্টমস আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১২ সালের দিকে এটি নিয়ে কাজ শুরু করে এনবিআর। ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে নতুন শুল্ক আইনটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু এখনো জাতীয় সংসদে পাস হয়নি। বর্তমানে ১৯৬৯ সালের কাস্টমস আইন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলছে।

২০১৯ সালের জুলাই মাসে নতুন ভ্যাট আইন চালু করা হয়। ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে ২০১২ সালের আইনটি বাস্তবায়ন করতে অর্ধযুগ পেরিয়ে যায়। এ ছাড়া এনবিআরের প্রস্তুতিও ছিল না।

পুরোনো আইন দিয়ে প্রতিবছরের বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে, লেনদেন বাড়ছে। যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। কারণ, সংস্কার হয়নি, আইনগুলো যুগোপযোগী নয়। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু হয়নি।
মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, সাবেক চেয়ারম্যান, এনবিআর

গত ১০ বছরে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইন ছাড়া বাকি শুল্ক এবং আয়কর আইনের একটিও চালু করা সম্ভব হয়নি। অথচ বর্তমান সরকার ক্ষমতার আসার প্রথম মেয়াদেই এই তিনটি নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ১০ বছরে রাজস্ব খাতে বড় আইনি ও কাঠামোগত সংস্কার হয়নি। ভ্যাট আইন চালু হলেও অনেক ক্ষেত্রে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। পুরোনো ‘ঢাল-তলোয়ার’ নিয়েই প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ে নামে এনবিআর।

জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরোনো আইন দিয়ে প্রতিবছরের বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে, লেনদেন বাড়ছে। যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। কারণ, সংস্কার হয়নি, আইনগুলো যুগোপযোগী নয়। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু হয়নি।’

করদাতা খুব বেশি বাড়েনি

এদিকে গত ১০ বছরে করদাতার সংখ্যা খুব বেশি বাড়েনি। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১৪ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএনধারী) বার্ষিক রিটার্ন জমা দিয়েছেন। ১০ বছর পরে এসে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২২ লাখে। অথচ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (টিআইএন) সংখ্যা ৪২ লাখ। কর-জিডিপি অনুপাত কমে এক অঙ্কের ঘরে নেমেছে।

এখন উপজেলা পর্যায়ে কর দেওয়ার সামর্থ্যবান লোক আছেন। ব্যবসাকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। কিন্তু দু-চারটি ছাড়া সব উপজেলায় কর অফিস নেই। জেলা পর্যায়ে কর অফিস বিস্তৃত হয়েছে।