১২ অতিধনীর হাতে ১৩ অঙ্কের অর্থ

এলন মাস্ক, ওয়ারেন বাফেট, মার্ক জাকারার্গ , বিল গেটস, জেফ বেজোস

বাংলায় দুটি কথা আছে—টাকায় টাকা আনে এবং টাকার নৌকা পাহাড়ের ওপর দিয়ে চলে। অর্থাৎ হাতে অঢেল টাকা মানে, অর্থবিত্ত এলে মানুষ বেশ ক্ষমতাবান হয়ে ওঠে। তখন তারা বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি কাজে লাগিয়ে রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ কুক্ষিগত করে। অর্থনীতি ও রাজনীতি উভয় ক্ষেত্র থেকে নিজেদের ফায়দা বা সুবিধা লুটে নেয়। এভাবে নেপথ্যে থেকে রাজনীতির কলকাঠি নেড়ে ধনসম্পদ আরও বাড়ানোই হয়ে ওঠে বিত্তবানদের অন্যতম লক্ষ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের এ রকম বিত্তবানদের মধ্য থেকে শীর্ষ ১২ জনকে আলোচনায় নিয়ে এসেছে সেই দেশের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ (আইপিএস)। এই কয়জন অতিধনীর সম্মিলিত ধনসম্পদের পরিমাণ বেড়ে ১৩ আগস্ট ১৩ অঙ্কে অর্থাৎ এক ট্রিলিয়ন (১ দশমিক শূন্য ১৫) মানে এক লাখ কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত হওয়ার প্রেক্ষাপটে আইপিএস তাঁদের আলোচনায় নিয়ে এসেছে। সামনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ সম্পর্কে অবশ্য কিছু বলেনি সংস্থাটি। তবে আইপিএস এসব ধনীকে ‘অলিগার্কিক ডজন’ এবং তাঁদের সমন্বিত সম্পদ এক লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়াকে ‘ডিস্টার্বিং মাইলস্টোন’ বা ‘পীড়াদায়ক মাইলফলক’ বলে অভিহিত করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ‘এই ১২ জনের হাতে অসম্ভব রকমের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা রয়েছে।’ উল্লেখ্য, ধনীরা অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করলে সেটাকে বলে অলিগার্কিক।

যুক্তরাষ্ট্রে ১২ জন অতিধনীর হাতে অসম্ভব রকমের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা রয়েছে বলে মনে করে আইপিএস নামের একটি প্রতিষ্ঠান

এ বছরের ১৮ মার্চ থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন করোনার কারণে সংকট-মন্দায় নাকাল, তখন এসব অতিধনীর সম্পদ ২৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলার বা ৪০ শতাংশ বেড়েছে। অথচ চলতি বছরে দেশটিতে অর্ধেকের বেশি পরিবারের আয় কমেছে।

১৮ মার্চ থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত এসব ধনীর সম্পদ বৃদ্ধির চিত্র দেখে নেওয়া যাক। এই করোনাকালে সর্বোচ্চ ৭৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী এবং অনলাইনিত্তিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান আমাজনের জেফ বেজোসের। মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সম্পদ ১৬ দশমিক ১ বিলিয়ন, বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের সিইও ওয়ারেন বাফেটের সম্পদ ১৩ দশমিক ১ বিলিয়ন, ফেসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গের সম্পদ ৪০ দশমিক ৮ বিলিয়ন বেড়েছে। প্রসঙ্গত, ১০০ কোটিতে ১ বিলিয়ন।

তবে টেসলা ও স্পেসএক্সের সিইও এলন মাস্কের সম্পদ ৪৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ২২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শতকরা হিসাবে এটিই প্রবৃদ্ধির সর্বোচ্চ হার।

মাইক্রোসফটের আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ব্যালমারের সম্পদ ১৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন, ওরাকলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি অ্যালিসনের ১১ দশমিক ৯ বিলিয়ন, গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিনের সম্পদ যথাক্রমে ১৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন করে বেড়েছে। এ ছাড়া ওয়ালমার্টের উত্তরাধিকারী অ্যালিস ওয়ালটনের সম্পদ ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন, জিম ওয়ালটনের সম্পদ ৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ও রব ওয়ালটনের সম্পদ ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে।

সম্পদের দিক থেকে বর্তমানে যথারীতি সবার ওপরে আছেন জেফ বেজোস। যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের এই শীর্ষ ধনীর সম্পদ ১১৩ বিলিয়ন থেকে ৭৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন বেড়ে ১৯৪ দশমিক ৯ বিলিয়নে উঠেছে। বর্তমানে প্রতি সেকেন্ডে তাঁর আয় ৮৩ হাজার ডলারের বেশি, যা বাংলাদেশের প্রায় ৭১ লাখ টাকা।

বিল গেটসের সম্পদ ৯৮ বিলিয়ন থেকে ১১৪ বিলিয়নে, মার্ক জাকারবার্গের সম্পদ ৫৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন থেকে ৯৫ দশমিক ৫ বিলিয়নে, ওয়ারেন বাফেটের সম্পদ ৬৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন থেকে ৮০ বিলিয়নে উঠেছে। তবে এলন মাস্ক ২৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন থেকে ৭৩ বিলিয়নের মালিক হয়েছেন। স্টিভ ব্যালমার ৫২ দশমিক ৭ বিলিয়ন থেকে ৭১ বিলিয়ন, ল্যারি অ্যালিসন ৫৯ বিলিয়ন থেকে ৭০ দশমিক ৯ বিলিয়ন, ল্যারি পেইজ ৫০ দশমিক ৯ বিলিয়ন থেকে ৬৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন, সের্গেই ব্রিন ৪৯ দশমিক ১ বিলিয়ন থেকে ৬৫ দশমিক ৬ বিলিয়নের মালিক হন।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের পরিবারপ্রতি আয় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে, যা এ ক্ষেত্রে ১৯৫০ সালের পর দেশটির সবচেয়ে বড় পতন।

করোনার আগেই যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য বেড়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। এটি করোনাভাইরাসের কারণে আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সূত্র: মার্কেট ওয়াচ, ইনইকুয়েলিটিওআরজি, বিজনেস ইনসাইডার।