৬৮ বছরে সবচেয়ে বড় সংকোচন

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ভারতে আটটি খাতের মধ্যে কেবল কৃষি ও বিদ্যুৎ ছাড়া বাকি ছয় খাতেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। বিশেষ করে সেবা, উৎপাদন ও খনিজসম্পদ খাতের অবস্থা খুবই খারাপ। সব মিলিয়ে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বড় ধরনের সংকোচন চলছে।

চলতি ২০২০–২১ অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৭ শতাংশ সংকুচিত হবে। ১৯৫২ সাল–পরবর্তী সাত দশকে ভারতের জিডিপি কখনো এতটা সংকুচিত হয়নি। আর চার দশকের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটির জিডিপি সংকুচিত হচ্ছে। ৪০ বছর আগে ১৯৮০ সালে দেশটির জিডিপি ৫ দশমিক ২ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল। ২০২১ সালে এশিয়ায় ভারতের চেয়ে বেশি জিডিপি সংকোচন হবে শুধু ফিলিপিনে। পূর্ব এশিয়ার দেশটির জিডিপি সাড়ে ৮ থেকে সাড়ে ৯ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।

আগের ২০১৯–২০ অর্থবছরের চেয়ে এবারে ভারতে জিডিপির পরিমাণ কমবে ১১ লাখ ৩০ হাজার কোটি রুপি। আগের অর্থবছরে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। ভারতের ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস (এনএসও) এমনটাই প্রাক্কলন করেছে। ইতিপূর্বে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) ৭ দশমিক ৫ শতাংশ সংকোচন প্রাক্কলন করেছিল।

তবে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পূর্বাভাস আরও খারাপ। বিশ্বব্যাংকের গত সপ্তাহের প্রাক্কলনে বলা হয়েছে, ২০২০–২১ অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতিতে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ সংকুচিত হবে। আশার কথা হচ্ছে, বিশ্বব্যাংকের এই পূর্বাভাস তাদের গত বছরের জুনে দেওয়া পূর্বাভাসের চেয়ে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ কম।

এদিকে এডিবি ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই বলে রেখেছে, চলতি অর্থবছরে ভারতের জিডিপি ৮ শতাংশ সংকুচিত হবে। এর আগে সংস্থাটি ৯ শতাংশ সংকোচনের পূর্বাভাস দিয়েছিল।

আগামী ৩১ মার্চে সমাপ্য চলতি অর্থবছরে ভারতের কৃষি ও বিদ্যুৎ খাতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ ও ২ দশমিক ৭ শতাংশ। বাণিজ্য, হোটেল, পরিবহন, যোগাযোগ ও ব্রডকাস্টিং সেবা খাতেই সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ৪ শতাংশ সংকোচন ঘটবে। দ্বিতীয় সর্বাধিক ১২ দশমিক ৬ শতাংশ সংকুচিত হবে নির্মাণ খাতে। এ ছাড়া আগের অর্থবছরের চেয়ে উৎপাদন ৯ দশমিক ৪ শতাংশ, খনিজে ১২ দশমিক ২১ শতাংশ কমবে।

সার্বিকভাবে দুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল দেশটি (১৩০ কোটি) করোনাভাইরাসে আক্রান্তের দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। তা থেকে সহজেই অনুমেয় যে করোনাভাইরাসের প্রভাব ও কঠোর লকডাউনের কারণে ব্যবসায়–বাণিজ্য ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হওয়ায় উন্নয়নশীল এই অর্থনীতির ওপর দিয়ে কতটা ধকল যাচ্ছে। যেমন আগের বছরের চেয়ে সরকারের ব্যয় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়লেও ব্যক্তিপর্যায়ের ভোগব্যয় সাড়ে ৯ শতাংশ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ সাড়ে ১৪ শতাংশ কমবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস (এনএসও)।

কোভিড–১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এরই মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির আবিষ্কৃত টিকা অনুমোদন করেছে।

ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চের প্রধান অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ভরতের জিডিপি সংকোচনের হার সরকারি প্রাক্কলনের চেয়ে খানিকটা বেড়ে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে।

ক্রিসল রিসার্চের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ধর্মকীর্তি জোশি বলেন, সংকোচন গিয়ে সাড়ে ৯ শতাংশে ঠেকবে।

ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। এতে বলা হয়, উন্নত দেশগুলোর চেয়েও ভালোভাবে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করার ফলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে গতি ফিরে এসেছে।

আগামী ১ এপ্রিল ভারতের ২০২১–২২ অর্থবছর শুরু হবে। এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন লোকসভায় আগামী অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন।

সূত্র: সিএনবিসি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আল–জাজিরা।