৯ মাসে বিশ্বব্যাপী ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের শ্রম আয় হারিয়েছে

  • করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে বিশ্বব্যাপী শ্রম আয় সাড়ে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার কমেছে বলে জানিয়েছে আইএলও।

  • চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে গত ডিসেম্বরের তুলনায় বৈশ্বিক শ্রমঘণ্টা কমেছে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ, যা প্রায় ৫০ কোটি পূর্ণকালীন চাকরির সমতুল্য।

  • আইএলওর প্রধান গাই রাইডার বলেন, উন্নয়নশীল দেশের শ্রমিকদের আয়ের পরিমাণ কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশেরও বেশি।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে বিশ্বব্যাপী শ্রম আয় সাড়ে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার কমেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় শ্রম আয় সংকুচিত হয়েছে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। আইএলও বলছে, সবচেয়ে বেশি কমেছে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলোতে। এ সব অঞ্চলে শ্রম আয় কমেছে প্রায় ১৫ দশমিক ১ শতাংশ। এ ছাড়া অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, দেশটির শ্রম আয় কমেছে ১২ দশমিক ১ শতাংশ।

সম্প্রতি শ্রম ক্ষেত্রে বিশ্বে মহামারির প্রভাব সম্পর্কে সর্বশেষ মূল্যায়নে সংস্থাটি এ তথ্য জানায়। কেভিড-১৯ মহামারির কারণে দেশে দেশে লকডাউন জারি করা হয়। ব্যাপকভাবে শ্রমিকের কর্মঘণ্টা হ্রাস পায় । যা বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের শ্রম আয় ব্যাপক কমিয়ে দিয়েছে। মহামারির  কারণে এরই মধ্যে কয়েক কোটি মানুষ চাকরি তো হারিয়েছেই, একই সঙ্গে ব্যাপক মাত্রায় কমেছে মজুরিও।

‘কোভিড-১৯ এবং ওয়ার্ল্ড ওয়ার্কের’ এই ষষ্ঠ সংস্করণে আরও বলা হয়েছে, এ বছরের প্রথম নয় মাসে বিশ্বব্যাপী কর্মঘণ্টার ক্ষতি আগের অনুমানের চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে গত ডিসেম্বরের তুলনায় বৈশ্বিক শ্রমঘণ্টা কমেছে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ, যা প্রায় ৫০ কোটি পূর্ণকালীন চাকরির সমতুল্য। অথচ জুনে আইএলও পূর্বাভাস দিয়েছিল যে দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে কর্মঘণ্টায় পতন হতে পারে ১৪ শতাংশ। তবে ওই পূর্বাভাসের চেয়ে কর্মঘণ্টা হারিয়েছে অনেক বেশি।
এমনকি চতুর্থ প্রান্তিকেও এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছে আইএলও।

আইএলও বলছে, যে কর্মক্ষম সময় এত বেশি কমার একটি কারণ হলো উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির শ্রমিকেরা, বিশেষত অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীরা অতীতের সংকটের চেয়ে এবারে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

আইএলওর পূর্বাভাস অনুযায়ী বৈশ্বিক কর্মঘণ্টায় কমার পরিমাণ এ বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে গত বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। যা সাড়ে ২৪ কোটি পূর্ণকালীন চাকরির সমান। সংস্থাটি এর আগে পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, চতুর্থ প্রান্তিকে বৈশ্বিক শ্রমঘণ্টায় এক বছর আগের তুলনায় পতন হবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। সংস্থাটি মনে করছে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নশীল ও উঠতি অর্থনীতিগুলোয় শ্রমিকেরা, বিশেষ করে যারা অনানুষ্ঠানিক চাকরিতে নিয়োজিত রয়েছেন, তারা অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

ভারতে লকডাউনের কারণে কাজ না থাকায় অনেক মানুষ গ্রামে ফিরে যান। বাসে ওঠার আগে তাদের দিকে জীবানুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।
ছবি: রয়টার্স

আইএলও বলছে, যে কর্মক্ষম সময় এত বেশি কমার একটি কারণ হলো উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির শ্রমিকেরা, বিশেষত অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীরা অতীতের সংকটের চেয়ে এবারে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সংস্থাটি বলছে, অনেক দেশের কঠোর লকডাউন উঠে গেলেও, লকডাউনের প্রভাব অঞ্চলভেদে ভিন্ন। বিভিন্ন দেশের ৯৪ শতাংশ বৈশ্বিক শ্রমিক এখনো কোনো না কোনো বিধিনিষেধের আওতায় রয়েছেন। ৩২ শতাংশ জরুরি ছাড়া বাকি সব কাজে বিধিনিষেধ আছে এমন অঞ্চলে আছে।

আইএলওর প্রধান গাই রাইডার বলেন, উন্নয়নশীল দেশের শ্রমিকদের আয়ের পরিমাণ কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশেরও বেশি। সর্বোপরি, যেখানে দুর্বলতম সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে সেখানেই পতন বেশি দেখা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী সরকারগুলো অর্থনীতি রক্ষায় প্রণোদনা কার্যক্রম হাতে না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত। সারা বিশ্বে প্রায় ৯ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের এ ধরনের প্রণোদনা কার্যক্রম নেওয়া হয়। যা না নেওয়া হলে দ্বিতীয় প্রান্তিকে বৈশ্বিক শ্রমঘণ্টা ২৮ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারত। তবে সমস্যা হলো, এ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে অসমভাবে। এ ক্ষেত্রে ধনীদের চেয়ে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো সামগ্রিক সহায়তায় কম পেয়েছে। যা প্রায় ৯৮ হাজার ২০০ কোটি ডলার।