কর আদায় বাড়াতে হলে করকাঠামোয় সংস্কার করতে হবে

নতুন বাজেটে ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকার কর আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। কর আদায় বাড়াতে হলে করকাঠামোয় সংস্কার করতে হবে। করনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন—এই দুটি দায়িত্ব একসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে রাখা যাবে না। এ ছাড়া যেকোনো নীতি কমপক্ষে পাঁচ বছরের জন্য করতে হবে।

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আজ সোমবার আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন অ্যামচেমের কোষাধ্যক্ষ আল মামুন এম রাসেল।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, শুধু বিদেশি নয়, দেশি বিনিয়োগকারীদের জন্যও দীর্ঘমেয়াদি নীতি থাকা দরকার। না হলে তাঁরা ব্যবসার পরিকল্পনা করতে পারেন না। তাই সরকারের যেকোনো নীতিই অন্তত পাঁচ বছরের জন্য হওয়া দরকার। সময়-সময় প্রজ্ঞাপন দিয়ে সেই নীতি পরিবর্তন করা উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীরা কর দিতে চাই। তবে কর দেওয়ার প্রক্রিয়াটি অবশ্যই হয়রানিমুক্ত হতে হবে।’

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, করনীতি প্রণয়ন ও কর আদায় আলাদা সংস্থার হাতে থাকতে হবে। কারণ, যিনি কর আদায় করবেন, আবার তিনিই বিচার করবেন, সেটি হতে পারে না। তিনি বলেন, ‘রাজস্ব আদায় বাড়াতে আমরা করজাল বাড়াতে বলছি। যাঁরা কর দেন, তাঁদের ওপরই নতুন করে করের বোঝা চাপানো হয়। আমাদের অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি অনেক বড়। সেখান থেকে কর আদায় বাড়াতে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কর কার্যালয় স্থাপন করতে হবে।’

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) চেম্বারের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, ‘বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর কাছে কীভাবে বাজেট বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং কীভাবে কর আদায় হচ্ছে, সেটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গত ৫০ বছর যেভাবে কর আদায় হয়েছে, আগামী অর্থবছরেও একইভাবে করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে; কিন্তু আমরা করকাঠামোর পরিবর্তন চাই। এনবিআরের সংস্কার চাই। এ ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অদক্ষতা রয়েছে। সেখানেও সংস্কার লাগবে।’

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, রাজস্ব আদায়ে বহুদিন ধরে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও যথাযথভাবে আদায় হচ্ছে না। মানুষ কর দিতে উৎসাহী না হয়, তেমন ব্যবস্থা রয়েছে বাজেটে। কর না দিয়েও থাকা যাবে। পরে কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগও আছে। তিনি বলেন, পরোক্ষ কর সংগ্রহে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। এতে সবার ওপর প্রভাব পড়ে। সরাসরি কর আদায় বাড়ানোর বিষয়ে মত দেন তিনি।

বাজেট আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়। আবার মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হলেও সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, করপোরেট কর কমানো ইতিবাচক। তবে অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্পের জন্য মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে কর বাড়ানো হয়েছে। এতে খুব বেশি কর আদায় হবে না; উল্টো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। শেয়ারবাজারের ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফার ক্ষেত্রে করারোপ করা হয়েছে। এতে বাজারে ভুল বার্তা যাবে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়ছে। খেলাপি ঋণের হারও বাড়ছে। সুদের হার বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে খেলাপি ঋণ।

আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন এল-আর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিইও রিয়াজ ইসলাম, অ্যামচেমের পরিচালক মো. মঈনুল হক প্রমুখ।