ছোটরা ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে

  • কিছু ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো সক্রিয় হলেও ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এবং প্রাক্-জাহাজীকরণ পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচির ক্ষেত্রে পিছুটানে রয়েছে।

  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠি, নোটিশ, তদারকির পরও কিছু খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ছে না।

  • সিএমএসএমই খাতে মাত্র ২০.৫৬% বিতরণ, এক মাসে বাকি ৮০% ঋণ বিতরণ
    করতে হবে।

  • প্রাক্-জাহাজীকরণ পুনঃ অর্থায়ন খাতে ৫,০০০ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ১ কোটি টাকা বিতরণ।

ব্যাংকগুলো সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের প্রায় ৫৪ শতাংশ বা ৪৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। এই প্যাকেজের আওতায় বড়দের ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে ব্যাংকগুলো বেশ সক্রিয় থাকলেও ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি (সিএমএসএমই) এবং প্রাক্-জাহাজীকরণ পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচি খাতে ঋণ বিতরণে তারা এখনো পিছুটানে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি, নোটিশ ও তদারকি বাড়িয়েও এসব খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে গতি বাড়াতে পারছে না।

করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় সরকার প্রায় ৮৬ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এর অধীনে দেওয়া ঋণের সুদহার ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত। শ্রমিকদের বেতন ও সব গ্রাহকের দুই মাসের সুদ ভর্তুকি প্রদান এবং কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা-এসবই ছিল প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে। গত এপ্রিলে এই ঋণ কর্মসূচি চালু হয়। এ ছাড়া গত জানুয়ারি থেকে ঋণের কিস্তি না দিলেও কেউ খেলাপি হবেন না, এমন সুবিধাও ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রাক্-জাহাজীকরণ পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচি ঋণে গ্রাহকদের আগ্রহ কম। আবার অনেক জাহাজীকরণ বাতিল হওয়ায় গ্রাহকেরা ঋণ পাচ্ছেন না। ছোটদের ঋণ বিতরণে তদারকি বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম

ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এবং প্রাক্-জাহাজীকরণ পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচি খাতে ঋণ না দেওয়ার কারণ এমন নয় যে ব্যাংকগুলো গ্রাহক খুঁজে পাচ্ছে না। বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যাংকগুলো এসব ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে আগ্রহী নয়। তাই খাত দুটির উদ্যোক্তা গ্রাহকেরা বাধ্য হয়ে এখন ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। ঋণ না পাওয়ায় তাঁদের অনেকেই প্রণোদনা ঋণ বিতরণের ওপর তদারকি বাড়াতে হটলাইন চালুর দাবি জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাক্-জাহাজীকরণ পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচি ঋণে গ্রাহকদের আগ্রহ কম। আবার অনেক জাহাজীকরণ বাতিল হওয়ায় গ্রাহকেরা ঋণ পাচ্ছেন না। ছোটদের ঋণ বিতরণে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। এরপরও ঋণ সেভাবে বাড়ছে না। ঋণ পেতে গ্রাহকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’

জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের ৩৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ইতিমধ্যে ২৫ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের জন্য বরাদ্দ করা ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এখন পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে মাত্র ২০ দশমিক ৫৬ শতাংশ বা ৪ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। এই ঋণ পেয়েছে ১১ হাজার ১৮৩টি প্রতিষ্ঠান। এই খাতে পুরো ঋণ বিতরণের জন্য চলতি অক্টোবর মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই অবস্থায় সরকারি ব্যাংকগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়কে, আর বেসরকারি ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংককে আশ্বাস দিয়েছে, অক্টোবরের মধ্যে পুরো ঋণ বিতরণ করা হবে। কিন্তু এই খাতে পাঁচ মাসে ২০ দশমিক ৫৬ শতাংশ ঋণ দেওয়ার পর কীভাবে এক মাসে বাকি ৮০ শতাংশ ঋণ বিতরণের লক্ষ্য অর্জিত হবে, এটা বিস্ময়কর।

একইভাবে প্রান্তিক কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল। ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বিতরণের হার মাত্র ৩৬ শতাংশ। ঋণ পেয়েছেন ১৪ হাজার ৯৫৬ জন প্রান্তিক মানুষ।

কৃষকদের জন্য নেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজেও আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। ফলে ৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ১ হাজার ৯৫ কোটি। টাকা বিতরণ হয়েছে। ঋণ পেয়েছেন ৪৬ হাজার ৮০৪ জন কৃষক।

রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৯ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। ঋণ পেয়েছে ১ হাজার ৩৬১ জন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।
এদিকে শ্রমিকদের বেতন খাতের পুরো অর্থই খরচ হয়ে গেছে।

প্রাক্-জাহাজীকরণ পুনঃ অর্থায়ন খাতের জন্য রাখা ৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এতদিনে মাত্র এক কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৯ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। ঋণ পেয়েছে ১ হাজার ৩৬১ জন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।
এদিকে শ্রমিকদের বেতন খাতের পুরো অর্থই খরচ হয়ে গেছে। একইভাবে সব গ্রাহককে সুদ ভর্তুকি খাতের ২ হাজার কোটি টাকাও দেওয়া হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো দুই মাসের সুদের হিসাব না দেওয়ায় সরকার এখনো ভর্তুকি দেয়নি।

রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, বড়দের ঋণ দেওয়া শেষের দিকে। এখন ছোটদের দিকে নজর দেওয়া হবে।