জামানতবিহীন এসএমই ঋণে হঠাৎ কড়াকড়ি আরোপ

  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ির কারণে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণের প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে।

  • তহবিল খরচ কম হওয়ায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ ঋণ দিতে আগ্রহী, আর সুদ কম বলে উদ্যোক্তারাও তা পেতে চান।

বাংলাদেশ ব্যাংক

অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান উদ্যোক্তাদের এক কোটি টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ দিচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, সেখান থেকেও জামানতবিহীন ঋণ দেওয়া হচ্ছে। জামানতবিহীন এসব ঋণের বেশির ভাগের আকার ১৫-২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংক হঠাৎ করে এখন জানিয়েছে, ৫ লাখ টাকার বেশি জামানতবিহীন ঋণ দিলে এর বিপরীতে পুনঃ অর্থায়ন সুবিধা (কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে) পাওয়া যাবে না।

মূলত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের আওতায় নতুন করে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন অনুযায়ী, ব্যক্তিগত গ্যারান্টিকে জামানত হিসেবে গণ্য করার সুযোগ নেই। হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এভাবে কড়াকড়ি আরোপে সমস্যায় পড়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণের প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে। জামানত পাওয়া সাপেক্ষে ঋণপ্রক্রিয়া শুরুর কথা জানিয়েছে তারা।

গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের এক নির্দেশনায় বলা হয়, এই বিভাগের আওতায় পরিচালিত চারটি পুনঃ অর্থায়ন স্কিম থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক পুনঃ অর্থায়ন প্রাপ্তির বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে (সিএমএসএমই) খাতে চলতি মূলধন ঋণ সরবরাহ নির্বিঘ্ন করার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন স্কিম গঠন ও এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। তবে এর আওতায় প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে পুনঃ অর্থায়ন সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে লক্ষ করা গেছে, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের জন্য প্রযোজ্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩ অনুযায়ী ‘জামানতবিহীন ঋণ’সংক্রান্ত নির্দেশনা যথাযথভাবে পরিপালন করছে না। ফলে তাদের পুনঃ অর্থায়ন প্রাপ্তি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

আইনটিতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টিকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করা যাবে না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই ঋণ নীতিমালায়, ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, তহবিল ব্যয় বেশি হওয়ায় এসএমই ঋণের জন্য তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃ অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল। ঋণের ২৫ শতাংশ পুনঃ অর্থায়ন পায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন পুনঃ অর্থায়ন না পেলে অনেক উদ্যোক্তাই ঋণ থেকে বঞ্চিত হবেন।

জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আরিফ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ দেওয়া হয়। এর ফলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা অনেক ঋণ পায়, এতে কর্মসংস্থানও বাড়ে। এখন যদি ৫ লাখ টাকার বেশি জামানতবিহীন ঋণে পুনঃ অর্থায়ন না মেলে, তাহলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ঋণ বিতরণে আগ্রহ হারাবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুরো ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণে। যাদের জামানত নেই, কিন্তু ভালো উদ্যোক্তা, তাদের সহায়তা করা জরুরি।’

বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব তহবিল ও বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর তহবিল নিয়ে পুনঃ অর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দেওয়ার পর সেই পরিমাণ টাকা এসব তহবিল থেকে কম সুদে নিতে পারে। এতে তাদের তহবিল খরচ কমে আসে। ফলে তারা ঋণ দিতে আগ্রহী হয়। আর সুদ কম হওয়ায় উদ্যোক্তাদেরও আগ্রহ এসব ঋণে।

তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনে হয় না এতে বড় কোনো সমস্যা হবে। সমস্যা হলে দুঃখজনক হবে।’

গত মার্চ পর্যন্ত এসএমই খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। শুধু জানুয়ারি-মার্চ সময়ে বিতরণ হয়েছে ৩৭ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা।

করোনাভাইরাসের ক্ষত মোকাবিলায় কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ঋণ বিতরণের সময় চলতি অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ ঋণের সুদের মাত্র ৪ শতাংশ দিতে হবে উদ্যোক্তাদের, বাকি ৫ শতাংশ সুদ সরকার দেবে। ক্ষুদ্র ও ছোটরা যাতে ঋণ পায়, সে জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণের ১০ হাজার কোটি টাকা পুনঃ অর্থায়ন করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে এসব ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো বক্তব্য পাওয় যায়নি।